নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মনে করছেন সরকারের একটি মহল তার একটি রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করায় প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি অভিমান করেছেন। তিনি আশা করছেন অচিরেই তা কেটে যাবে। শনিবার রাত ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর হেয়ার রোডের সরকারি বাসা ছেড়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সরবরাহ করা একটি চিঠিতে এ কথা বলেন তিনি। চিঠি নিচে হুবহু দেয়া হলো:
`আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী ও বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সরকারের একটা মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন, যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমার বিশ্বাস। সেই সাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শংকিতও বটে। কারণ গতকাল প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপরি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিন মাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বলে আনবে না।’
এক মাসের বেশি অবকাশের পর গত ৩ অক্টোবর আদালতে যোগদানের কথা ছিল সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। এর আগের দিন ২ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্রধান বিচারপতি এক মাসের ছুটির আবেদন করেছেন। তার দুই দিন পর তিনি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য দূতাবাসে গিয়ে ভিসার আবেদন করেন। এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী বিএনপির নেতাদের মধ্যে অনেক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ উঠলেও প্রধান বিচারপতি নীরব ছিলেন। আজই প্রথম তিনি তার বিদেশ যাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কারো চাপে নয়, আমি স্বেচ্ছায় অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। ছুটি শেষে আবার ফিরে আসব।’ তিনি আরো বলেন, কারো সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই। বিচার বিভাগ যেন বিব্রত না হয় সে জন্য বিদেশ যাচ্ছেন তিনি। তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেনি কেউ। বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ ৪৪৭ নম্বর ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা হন প্রধান বিচারপতি। পথে সিঙ্গাপুরে এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি করবেন। অস্ট্রেলিয়ার ভিসা আবেদনে প্রধান বিচারপতি পাঁচ বছরের ভিসা চেয়েছিলেন। তাকে তিন বছরের ভিসা দেয়া হয়েছে। তার মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তিনি সেখানেই উঠবেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি