নড়াইল প্রতিনিধি:
দ্বিতীয় দফা অভিযান চালিয়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বাড়িভাঙ্গা খালের অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম এম আরাফাত হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় নলদী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সাইদুজ্জামানসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অভিযান চালিয়ে বাড়িভাঙ্গা খালের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে তিনটি সুইতে জালের বাধ উচ্ছেদ করা হয়। এসময় অন্তত ২০ মণ দেশীয় প্রজাতির মাছ উন্মুক্ত করা হয় এবং একটি সুইতে জাল কেটে অপসারণ করা হয়।
এছাড়া বাড়িভাঙ্গা স্লুইচ গেট খুলে দিয়ে বিল থেকে দ্রুত পানি অপসারণের ব্যবস্থা করা হয়। জানাগেছে, লোহাগড়া উপজেলার সর্ববৃহত বিল ইছামতির সাথে নবগঙ্গা নদীর সংযোগ স্থাপন করেছে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বাড়িভাঙ্গা খাল। নোয়াগ্রাম, নলদী, লাহুড়িয়া ইউনিয়নসহ মাগুরার মোহম্মদপুর এলাকার বেশ কিছু এলাকার বিলের পানি বাড়িভাঙ্গা খাল দিয়ে নদীতে নেমে আসে। শীয় প্রজাতির মাছের উৎস্য হিসেবে খ্যাত খালটি স্থানীয় কতিপয় স্বার্থান্বেষী মানুষ আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে এবং বিভিন্ন কৌশলে ডিমওয়ালা মাছ, ছোট মাছ নিধন করে আসছিল। যার কারণে দেশীয় প্রজাতির পুটি, স্বরপুটি, শোল, টাকি, কৈ, শিং, পাবদা, ফলই, গুইতে, বাইন, টেংরা, কাকলেসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় রায়গ্রাম, কলাগাছি সহ পাশের এলাকার দুই শতাধিক মৎস্যজীবী বাড়িভাঙ্গা খালটি সারা বছর উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
খালটি উন্মুক্ত রাখার দাবিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন। ওই আবেদনের গত ২৯ সেপ্টেম্বর লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীনের নেতৃত্বে ওই খালের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ ভাবে মাছ ধরার আড়াআড়ি বাঁশের বাঁধ উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করে অভিযানের পরের দিন স্থানীয় কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল বাঁধ দিয়ে পুনরায় অবৈধ ভাবে মাছ শিকার করে আসছিলেন।
গত ৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। ওই অনুষ্ঠান থেকেও বাড়িভাঙ্গা খাল উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরও বাঁধ অপসারণতো দূরের কথা নতুন করে আরো বাঁধ স্থাপন করা হয়। বিষয়টি নড়াইল জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী অবগত হয়ে পুনরায় বাঁধ অপসারণের জন্য অভিযান পরিচালনার জন্য লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে বুধবার লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম এম আরাফাত হোসেনের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালিয়ে তিনটি সুইতের বাঁধ উচ্ছেদ করেন।
লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, বাড়িভাঙ্গা খালকে সারাবছর উন্মুক্ত রাখতে পারলে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে। ইজারা দেয়ার কোন বিধান না থাকলেও এলাকার কপিতয় স্বার্থান্বেষী মহল খালটিকে অবৈধভাবে ইজারা দিয়ে আসছিল। খালটি উন্মুক্ত রাখার জন্য নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক কঠোর নির্দেশ রয়েছে। এই খালটির দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নজরদারী রাখা হবে। একই সঙ্গে ইছামতি বিলে যাতে কৃষকরা নির্ধারিত সময়ে ফসল বপন ও রোপন করতে পারে সে লক্ষ্যে স্লুইস গেটটি খুলে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, নবগঙ্গা নদীতে সারাবছর জুড়ে মিঠা পানি থাকায় দেশীয় প্রজাতির মা মাছগুলি বাড়িভাঙ্গা খাল দিয়ে বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে ইছামতি বিলে ডিম ছাড়ার জন্য প্রবেশ করে। এবছর পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলামের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং নলদী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. সাইদুর রহমানের তদারিকতে মা মাছ নির্বিঘ্নে ইছামতি বিলে প্রবেশ করতে পারে। বিলের পানি কমে যাওয়ায় আশ্বিন কার্ত্তিক মাস জুড়ে মাছগুলি নদীতে নামতে থাকবে। মৎস্যজীবী কলাগাছি গ্রামের নিখিল বিশ্বাস জানান, চিত্রা ও নবগঙ্গা নদীতে পাট পঁচানোর কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ মরে যে ক্ষতি হয়েছে। বাড়িভাঙ্গা খালটি আশ্বিন-কার্ত্তিক মাস জুড়ে উন্মুক্ত থাকলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে এবং চিত্রা ও নবগঙ্গা নদী দেশীয় প্রজাতির মাছে ভরে উঠবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি