নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। এক্ষেত্রে অনলাইলে মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ভোট ব্যবস্থাপনার কাজ ডিজিটাল করতে এ সব সুপারিশ করা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের জন্য তৈরি করা খসড়া রোডম্যাপে এসব সুপারিশ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যা আগামী ২৩ মে ইসির সভায় চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, অনেক সময়ে নানা ধরনের বাধার কারণে অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন না এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে কমিশন সচিবালয় অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার প্রস্তাবনাটি রেখেছে। যাতে করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারিনি এমন অভিযোগ কেউ দিতে না পারেন।
একজন কর্মকর্তা বলেন, রোডম্যাপের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করণের পাশাপাশি ভোট ব্যবস্থাপনাকে আরো আধুনিকায়ন ও কার্যকর করতে এসব সুপারিশ রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এসব বিষয় ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করতে পারে।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে নির্বাচনী ব্যয় তদারকি করার আলাদা কমিটি এবং ভোটের অভিযোগ নেওয়ার জন্য বিশেষ সফট্যওয়ার ব্যবহার ও এসএমএসে অভিযোগ সংগ্রহ করা, রাজধানীর গুলিস্থান, মৌচাক, শাহবাগ, ফার্মগেট গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ডিজিটাল মনিটরে ফল প্রকাশ করার সুপারিশও করা হয়েছে খসড়া রোডম্যাপে। আগামী ২৩ মে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) রোডম্যাপ চূড়িন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ্।
তিনি বলেন, রোডম্যাপ আজকে চূড়ান্ত করার থাকলেও সেটি করা হয়নি। তবে ২৩ মে কমিশন বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হবে। তারপর এটি বই আকারে প্রকাশ করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন বিধিবিধান সংশোধনের কার্যক্রম সংশোধন দরকার হলে তা ডিসেম্বরের মধ্যে করার প্রস্তাব করা হয়েছে রোডম্যাপে। আইন সংশোধনে প্রয়োজনে কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হবে। মিটিংয়ে এটার উপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে এক বা একাধিক কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ বিষয়ে কমিশন সভা সূত্রে আরো জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পর্যবেক্ষণ নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে একমত হয়েছে কমিশন। প্রস্তাবিত নীতিমালার উপর রাজনৈতিক দল, পর্যবেক্ষক সংস্থা, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ যেকোনো নাগরিকের মতামত নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আজ সোমবার পর্যবেক্ষণ নীতিমালার সংশোধনী ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ওয়েবসাইট বা ডাকযোগে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মতামত দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ইভিএম দ্বারা করা যাবে কিনা তা আরেকটু পরে বলা যাবে। কারণ এটি পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয় আছে।
রাজনৈতিকদলের সঙ্গে কবে নাগাদ আলোচনা শুরু করা হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, রোডম্যাপ চূড়ান্ত না হলে এটা বলা যাচ্ছে না। তবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিকদলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রোববার কমিশনের বৈঠকে মৃত ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের বিষয়ে নতুন আইন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন সভা। তবে এ ধরনের আবেদন পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে কমিশনের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম গতিশীল করতে চার কমিশনারের নেতৃত্বে পৃথক চারটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হলেও তা নিয়ে কমিশনের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিশন সভায় পাঁচটি এজেন্ডা ছিল। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদের রোডম্যাপ চূড়ান্তকরণ। কমিশন সচিবালয় থেকে ওই সভায় রোডম্যাপ উত্থাপন করা হয়। ওই রোডম্যাপের উপর আলোচনায় অংশ নেন কমিশনাররা। রাজনৈতিক দল, পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সেপ্টেম্বরের আগেই করা যায় কী না- সে বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া প্রস্তাবিত রোডম্যাপ থেকে নির্বাচনে ভোটারদের ইসির উদ্যোগে স্লিপ দেয়া এবং নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং করার কমিটির বিষয়টি প্রাথমিকভাবে বাদ দেয়া হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/এমএইচ