নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেশ কিছুদিন দেশের ক্রিকেট পাড়ার বড় আলোচনার বিষয় টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্ব। তবে দুর্বল নেতৃত্বের চেয়ে বেশি আলোচনা চলছে তার নানা সময়ের বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে। কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলনে টিম ম্যানেজমেন্ট বিশেষ করে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহেকে ধুয়ে দেন তিনি। দলের ভেতরের কিছু কথাও ইচ্ছে অনিচ্ছেতে বের করে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গিয়েও। আগেই মুশফিকের ওপর চটে ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এবার টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর ক্ষেপলেন আরো। মুশফিকের এ সব মন্তব্যে দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলে তীব্র মন্তব্য করেছেন বোর্ড প্রধান। তাই দল দেশে ফেরার পর মুশফিকের টেস্ট অধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনায় বসবেন বলে জানান পাপন।
সোমবার রাজধানীর তেজগাঁয়ে এক অনুষ্ঠানে মুশফিকের মন্তব্য নিয়ে কথা বললেন পাপন, ‘ও (মুশফিক) যেসব মন্তব্য করছে সেটা দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। টস নিয়ে কোন অধিনায়ক সংবাদ মাধ্যমে এ ধরণের কথা বলতে পারে না। এটা দলের জন্য ভালো হচ্ছে না। বাংলাদেশের শরীরি ভাষা দেখে মনে হয়নি তারা জেতার জন্য মাঠে নেমেছে। এগুলো মুশফিকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। হয়তো তার কোন অস্বস্তি বা সমস্যা আছে। সেটা হতে পারে কোচের সাথে, হতে পারে টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে। দেশে আসার পর সমস্যার সমাধান হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি টেস্টেই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে টাইগাররা। বলার মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছিটেফোঁটাও ছিলনা তাদের খেলায়। এমনকি সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও টাইগার দল করেছে বেশ কিছু বড় ভুল। বিশেষ করে ফ্ল্যাট উইকেটে দুইবার টস জিতে বোলিং নেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন টেস্ট অধিনায়ক। আর সে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়েই পচেফস্ট্রুম টেস্টের প্রথম দিন শেষে কোচের সমালোচনা করেন মুশফিক। জানিয়ে দেন কিপিং ছেড়েছেন, কিন্তু ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তও কোচের ইচ্ছেয় নিতে হয়েছে। নিজের ইচ্ছেতে নয়।
শুধু এবারই নয়। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার কিপিং ও ব্যাটিং পজিশন নিয়ে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে দায় টিম ম্যানেজমেন্টের উপর চাপিয়ে দেন মুশফিক। এরপর তার মন্তব্যে তাকে সাবধানও করে দিয়েছিল বিসিবি। সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকের অধিনায়কত্বের সমালোচনাও করেছিলেন বিসিবি সভাপতি। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন করে বিতর্ক জন্ম দেওয়ায় ভয়াবহ ক্ষেপে গেছেন পাপন।
তবে এখনই মুশফিকের অধিনায়কত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই বিসিবির। দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানান পাপন। এছাড়াও ফিল্ডিং পজিশন মুশফিক নিজেই বেছে নিয়েছেন বলে জানান তিনি, ‘তার অধিনায়কত্ব ছিনিয়ে নেয়ার বা সরিয়ে দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি। সে কোথায় ফিল্ডিং করবে সেই সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের ছিল না। সিদ্ধান্তটি ছিল তার ব্যক্তিগত। কেউ চাপিয়ে দেয়নি।’
এদিকে রোববার দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ২৫৪ রানের বিশাল হারের পর নিজের মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেন মুশফিক। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো সত্যি ছিল বলে দাবী করেন তিনি। তবে তার কথায় কারও খারাপ লাগলে তার জন্যও ক্ষমাও চান অধিনায়ক, ‘যেটা সত্যি কথা, সেটাই বলেছি। এর জন্য যদি কারোর খারাপ লেগে থাকে আমার দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। … মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। তো আমিও মানুষ, আমার যদি ভুল হয়ে থাকে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী।’ এর সাথে বলেছেন, তাকে ক্যাপ্টেন হিসেবে রাখা না রাখার সিদ্ধান্তটা বোর্ডের।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ