দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:
মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া এক মুসলিম রোহিঙ্গাকে বিয়ে করায় বাংলাদেশের এক যুবককে খুঁজছে পুলিশ। গতকাল রোববার তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করায় ওই যুবককে আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
গত ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নির্যাতনে ৫ লাখ ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এটিকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা তরুণী রাফিজাকে (১৮) গত মাসে বিয়ে করেন বাংলাদেশি শিহাব হোসেন জুয়েল (২৫)। এরপর থেকে তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। রোববার পুলিশ জুয়েলের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রামে অভিযান চালিয়েছে। সিংগাইর থানার ওসি খন্দকার ইমাম হোসেন এএফপিকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি জুয়েল রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করেছেন। এরপর তার সন্ধানে গ্রামের বাড়ি চারিগ্রামে গিয়েছিলাম। কিন্তু, আমরা তাকে বাড়িতে পাইনি। জুয়েলের বাবাও জানেন না তার ছেলে কোথায়? তিনি জানান ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে দেখছেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বিশেষ করে মুসলিমরা বিয়ে করে এদেশের নাগরিক হচ্ছেন, এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে জুয়েলের বাবা বুলবুল হোসেন তার ছেলের বিয়ের পক্ষেই মত দেন। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে নাগরিকত্ব বিষয়টি বড় কোনো ইস্যু নয়।’ বুলবুল হোসেন প্রশ্ন রাখেন ‘বাংলাদেশিরা যদি খ্রিস্টান ও অন্য ধর্মের মানুষকে বিয়ে করতে পারেন, তাহলে আমার ছেলে কেন রোহিঙ্গাকে বিয়ে করতে পারবে না? তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে একজন মুসলিমকে বিয়ে করেছেন, যিনি প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।’
জানা গেছে, জুয়েল একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। রাখাইনের সাম্প্রতিক সংঘাতের পর রাফিজার পরিবার পালিয়ে সিংগাইরে আশ্রয় নেয়। সেখানেই জুয়েল তার প্রেমে পড়েন। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সিংগাইর থেকে এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ধরে প্রায় ২৬৫ মাইল দূরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে পাঠিয়ে দেয়। এরপর জুয়েলও কক্সবাজারে যান এবং একটার পর একটা শরণার্থী ক্যাম্পে রাফিজার সন্ধান করতে থাকেন। অবশেষে তিনি রাফিজার সন্ধান পান এবং তার পরিবারকে বিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এরপর কক্সবাজারেই তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু, বিয়ের পর থেকেই জুয়েল ও রাফিজা আত্মগোপনে আছেন। আর এটিই আগস্টের সংঘাতের পর বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে প্রথম কোনো বিয়ের ঘটনা।
স্থানীয় গণমাধ্যম খবর দিয়েছে, অনেক বাংলাদেশিই নির্যাতিতদের আশ্রয়স্থল রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে বড় সংখ্যকের প্রত্যাশা, তারা রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে করবেন। কক্সবাজারের বালুখালী সীমান্তের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এমনই এক ব্যক্তির সঙ্গে এএফপি’র প্রতিনিধির কথা হয়। প্রতিবেশী গ্রাম থেকে তিনি এখানে এসেছেন, ছোই ভাইকে বিয়ে দেওয়ার জন্য রোহিঙ্গা পাত্রী খুঁজতে। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ভাই সাহায্য করার মানসিকতা থেকে রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করতে চাইছে। সে মনে করে, নিপীড়িত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নারীকে বিয়ে করার অর্থ তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং অনেক পূণ্যের কাজ।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ কাজী হুমায়ুন রশিদ এএফপিকে বলেন, ‘পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিবিরে বিয়ে এবং তাদের পাচার রোধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যকার বিয়ে ঠেকাতে আমরা সব ধরনের পদক্ষে নিয়েছি।’ এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ইতোমধ্যে বিকেল পাঁচটার পর রোহিঙ্গা শিবিরে বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকদের সব ধরনের অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি