নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তালিকাভুক্ত মৌলভিত্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বা ভালো কোম্পানির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে শেয়ারে তাদের বিনিয়োগও বাড়ছে। এর ফলে বেড়েছে এ ক্যাটাগরি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের চাহিদা। যার কারণে বাজার মূলধনেও এসব কোম্পানির অবদান বাড়ছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিদিনই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ছিল সূচক। তাই গত সপ্তাহে (২-৫ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে প্রায় ১১০ পয়েন্ট। এদিকে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে।
সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে দেশের উভয় শেয়ারবাজার উত্থান প্রবণতায় শেষ হয়েছে। বেড়েছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। সপ্তাহশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ১০৯.৪৭ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই৩০ সূচক বেড়েছে ২৩.৮২ পয়েন্ট। অপরদিকে, শরীয়াহ বা ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৪.০৫ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৩টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ১৩৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির। আর লেনদেন হয়নি একটি কোম্পানির শেয়ার।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে চার কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এতে মোট ৩ হাজার ৬৭০ কোটি ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৮২৮ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে ২২৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯২ টাকা বেশি। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিলো ৩ হাজার ৪৪৩ কোটি ৫৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৬ টাকা। ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ৯১৭ কোটি ৫১ লাখ ৯১ হাজার ৭০৭ টাকা। আর সমাপ্ত সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে ১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
অন্যদিকে সপ্তাহশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক ৪১৫ পয়েন্ট বা ২.১৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ২৯৬ পয়েন্টে। এছাড়া অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসিএক্স ২৫৬ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ৩৬ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২৫৭ পয়েন্ট বা সিএসআই ১২ পয়েন্ট বেড়েছে। সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৭৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৩টির, কমেছে ১০২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির। আর এগুলোর ওপর ভর করে বিদায়ী সপ্তাহে ২০৫ কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮১ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের সপ্তাহ থেকে ২৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৮ হাজার ৫০৭ টাকা কম। আগের সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছিলো ৫০২ কোটি ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার ২৮৮ টাকা।
ডিএসইতে পিই অনুপাত বেড়েছে
সমাপ্ত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ২১ পয়েন্ট। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে পিই রেশিও অবস্থান করছে ১৬ দশমিক ৫২ পয়েন্টে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট।
সপ্তাহ শেষে খাতভিত্তিক ট্রেইলিং পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ১১.৪ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ২৯ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ২৫.৭ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ২৩.৭ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের ২৬.৯ পয়েন্টে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১২.৯ পয়েন্টে, সাধারণ বিমা খাতে ১৪.৬ পয়েন্টে, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ২৮.৫ পয়েন্টে। এছাড়া পাট খাতের পিই রেশিও মাইনাস ২২.৫ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ২৮.৩ পয়েন্টে, এনবিএফআই খাতে ২১.২ পয়েন্ট, কাগজ খাতের মাইনাস ৪৭ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৯.৮ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতের ১৮.৪ পয়েন্টে, চামড়া খাতের ১৯.৩ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৮ পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের ২৪.৭ পয়েন্টে এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ২১.৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সাপ্তাহিক রিটার্নে দর বেড়েছে
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দর (রিটার্ন) বেড়েছে ১১ খাতে। অন্যদিকে দর কমেছে ৯ খাতে। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আলোচ্য সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দও বেড়েছে সাধারণ বিমা খাতে। এই খাতে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ দর বেড়েছে। এরপরে ব্যাংক খাতে ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ দর বেড়েছে। অন্য খাতগুলোর মধ্যে সিমেন্ট খাতে ১ দশমিক ২ শতাংশ, সিরামিক খাতে দশমিক ৬৯ শতাংশ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে দশমিক ২৮ শতাংশ দর বেড়েছে। এছাড়া জীবন বিমা খাতে ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, আইটি খাতে ২.২৯ শতাংশ, আর্থিক খাতে ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, সেবা-আবাসন খাতে দশমিক ৮৭ শতাংশ, ট্যানারি খাতে দশমিক ১৮ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশন খাতে দশমিক ৮৯ শতাংশ দর বেড়েছে।
অন্যদিকে দর কমেছে বাকি ৯ খাতে। গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে পাট খাতে। এই খাতে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ দর কমেছে। এছাড়া পেপার অ্যান্ড প্রিন্টিং খাতে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, খাদ্য-আনুসঙ্গিক খাতে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ, বিবিধ খাতে দশমিক ৭৮ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে দশমিক ৪৬ শতাংশ, বস্ত্র খাতে দশমিক ৪৩ শতাংশ ও ভ্রমণ-অবকাশ খাতে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ দর কমেছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ