আশিকুর রহমান ব্রাক্ষনবাড়ীয়া (প্রতিনিধি) :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর উচ্চবিদ্যালয়ে পছন্দের শিক্ষক নিয়োগ না পাওয়ায় যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইমাম হাছান বাতেন ও প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহাম্মদ আহত হন। রাতেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদি হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সরকারি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা ১৫জন অংশ নেন। এতে প্রথম স্থান অধিকারীকে রোববার (১ অক্টোবর) বিধিমোতাবেক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া ব্যক্তিরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের প্ররোচনায় বিদ্যালয়ে ২০-২৫জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
বিদ্যালয়ের আলমারী থেকে ৭০ হাজার টাকা, রেজুলেশন খাতাসহ জরুরী কাগজপত্র লুট এবং আসবাবপত্রের ক্ষতিসাধন করে। এ সময় বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইমাম হাছান বাতেন ও প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহাম্মদ আহত হন। পরে আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় রাতেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহাম্মদ বাদি হয়ে শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ওরফে পল্টু, ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য সচিব আবদুল হান্নান সরকার ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ফকির ওরফে ডালিমসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং ২৫জনকে আসামী করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, বিদ্যালয়ের কর্মচারীদের বেতনের জন্য রাখা ৭০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রেজুলেশন খাতা নিয়ে গেছে। রাতে নবীনগর অঞ্চলের সহকারি পুলিশ সুপার চিত্তরঞ্জন পাল ও থানার ওসি মহোদয় বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। তিনি আরও বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া দুজনের প্ররোচনায় বিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ইমাম হাছান বাতেন বলেন, আমরা স্বচ্ছভাবে সহকারি প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছি এবং পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ব্যক্তিকে নিয়োগে কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভা শেষ হতে না হতেই আনোয়ার হোসেন, ডালিমসহ ১০-১২জন যুবক এসে কক্ষের টেবিল ভাংচুর করে রেজুলেশন খাতা নিয়ে যায়। এমপি সাহেবের পিএস বলেছেন রেজুলেশন খাতাটি ধনু মেম্বার সকালে দিয়ে আসবেন বিদ্যালয়ে, এ নিয়ে কোনো ঝামেলা করবেননা।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ফকির ওরফে ডালিম বলেন, আমি শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করেছি কিন্তু হামলার সময় ভেতরে ছিলাম না।
ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য সচিব আবদুল হান্নান সরকার বলেন, আমি সেখানেই যাইনি ঘটনার সময়, আমার নামটি শুধু শুধু দিয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন, প্রধান শিক্ষকের কক্ষের টেবিলের গ্লাস ডালিম ভেঙ্গেছে। আমি কিছুই করিনি আর রেজুলেশন খাতাও নেইনি আমরা। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাদেরকে হেয় করার চেষ্টা করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন ওরফে ধনু মিয়া বলেন, ডালিম আর হান্নান সরকারের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানিনা। তবে বিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা দুঃখজনক একটি বিষয়।
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসলাম সিকদার বলেন, শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর উচ্চবিদ্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ