নিজস্ব প্রতিবেদক:
সকালের আলোটা সবেমাত্র পূব আকাশে উঁকি দিচ্ছে। একটু একটু করে আলোর রেখা ছড়িয়ে পড়ছে শহরতলিতে। একদল তরুণ হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে সুরম্ব অট্টালিকার দিকে। কিন্ত অট্টালিকার দ্বাররক্ষী বড় বেশি বেরসিক। কিছুতেই ফটক গলে তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেবেন না। তরুণরাও নাছোড়বান্দা। সেজেগুজে প্রস্তুত হয়ে আসছে। ভেতরে ঢুকতেই হবে। আর না হলে তো মিলবে না সেই কাঙ্খিত চাকরি।
এমনই দৃশ্য দেখা গেলো বাংলাদেশের অন্যতম পুরাতন শহর যশোরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শংকরপুরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে। তরুণদের জমায়াতের কারণ এখানে দিনব্যাপী নিয়োগকর্তারা চাকরির দুয়ার খুলে বসেছেন। তরুণদের জীবন-বৃত্তান্ত সংগ্রহ করবেন। তাৎক্ষণিকভাবে দুই একজনকে যাচাই বাছাই করবেন। ব্যাটে বলে মিলে গেলে মিলতে পারে চাকরি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তরুণদের ভিড় জটলায় রূপ নেয়। তাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান নিরাপত্তা কর্মীরা। ও আগেই বলে রাখি এটি দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। যেখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তিন-তিনটি ভবন। এরই একটি ছোট্ট ভবনের তিন তলায় সকালে তথ্যও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক চাকরিপ্রার্থীদের আশার বাণী শোনালেন, বললেন ‘আপনারা কেউ হতাশ হবেন না। নিজেদেরকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলুন। আপনাদের সবার চাকরির ব্যবস্থা করবে সরকার।’ এ কথা শুনে মুহুর্মুহু করতালিতে নিজেদের উজ্জ্বীবিত করে তরুণরা। এদিকে পার্ক চত্বরে হট্টগোল লেগে যায়। কেননা কার আগে কে নিয়োগ কর্তাদের রাখা বাক্সে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেবেন তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে।
এমন হাজারো চাকরিপ্রার্থীদের উপস্থিতে জোয়ারের মতো কলকলিয়ে ওঠে পার্কটি। তখন যেন মনে পড়ে যায় কবি গুরুর কবিতার সেই লাইনটি, ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী, আমার সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।’ তরুণদের উৎসাহ দেখে নিয়োগ কর্তারাও বেজায় খুশি। যদিও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া মেলায় একটু ঝক্কি ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে। কিন্ত তা নিয়ে তাদের আক্ষেপ নাই।
এমনটাই জানালেন ওয়ালটেনের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের ব্যবস্থাপক আবুল হাসনাত। তিনি বলেন, যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও বেশি সিভি জমা পড়েছে। কথা ছিল আজকেই চাকরি প্রার্থীদের সাক্ষাৎ নেবো। কিন্তু তা আর হয়ে উঠছে না। শিগগিরিই ওয়ালটন যোগ্যদের সাক্ষাৎ নেবে।
একই কথা জানালেন এমসিসি নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ আবীর। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তিতে জানাশোনা আছে এমন তরুণদেরকেই আমরা কর্মী হিসেবে বেছে নেবো। তবে তাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। তাদের সিভি যাচাই বাছাই করে একটি শর্ট লিস্ট তৈরি করা হবে। আর তাদেরকে সাক্ষাতৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এদিকে চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই এই প্রথমবার সুযোগ মিললও সফটওয়্যারের আঁতুড়ঘরখ্যাত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে প্রবেশের সুযোগ।। এই সুযোগ জমিয়ে আড্ডা বসিয়েছে নান্দনিক এই পার্কের ভবন লাগোয়া পুকুড় পাড়ে। চাইলে আপনিও আসতে পারেন। যদি আপনার চাকরির প্রয়োজন হয় তহলে বিকাল পাঁচটার মধ্যেই চলে আসুন। নিয়োগকর্তারা আপনার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ