২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:২২

বান্দরবানে ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত জুমিয়ারা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বান্দরবানের আলীকদম-থানছি দুই উপজেলায় জুমের ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত এখন উপজাতীয়রা। বাম্পার ফলনে পাহাড়ে ধান কাটার আনন্দে মেতেছে পাহাড়ি নারীরা। শিশু-কিশোর, মা-বাবা কেউই বসে নেই ঘরে। পরিবার-পরিজন নিয়ে জুমিয়া পরিবারগুলো ধান কাঁটতে নেমেছে পাহাড়ে। এ এলাকায় বসবাসরত উপজাতীয়রা প্রতিবছর বিভিন্ন এলাকায় শতশত পাহাড়ে জুম চাষ করে। একই পাহাড়ে একাধিকবার জুম চাষ করা যায় না বলে জুমিয়ারা প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন পাহাড়ে জুমের চাষ করে। কিছুসংখ্যক শিক্ষিত পরিবার ছাড়া দুর্গমাঞ্চলে পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতীরা আজো জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একমাত্র সম্প্রদায় আদিকাল থেকে যারা এখনো পর্যন্ত জুম চাষের মাধ্যমেই সারা বছরের জীবিকা সংগ্রহ করে।
জুমিয়ারা প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন দেয়। মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো জুম চাষ শুরু করে। প্রায় ৩/৪ মাস পরিচর্যার পর সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয় পাহাড়ে জুমের ধান কাটা। চলতি মওসুমেও বান্দরবান জেলার আলীকদম-থানছিতে প্রায় এক হাজার তিন শত হেক্টর জমিতে জুম চাষ করা হয়েছে।
কৃষি সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছর আলীকদম-লামা-থানছি উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী জায়গায় জুম চাষ করা হয়েছে এবং জুমের বাম্পার ফলন হয়েছে এ বছর। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জুম চাষ অনেকাংশে কমে গেছে। চলতি বছরও পাহাড়ে জুমের ধানকাটা শুরু হয়েছে। জুমের ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত এখন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং জুমের অনুকূল আবহাওয়া থাকায় চলতি মৌসুমে ভাল ফলন হওয়ায় জুমিয়া পরিবারগুলো বেশ খুশি। আলীকদম-থানছি ডিম পাহাড় সড়কের দু’পাশের পাহাড়ে এখন শুধু পাকা ধান। স্ত্রী পরিবার-পরিজন নিয়ে জুমিয়া পরিবারগুলো নেমে পড়েছে জুমের ধান কাটতে। মা-বাবার সাথে ধান কাটতে নেমেছে আদিবাসী শিশুরাও। জুম চাষ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ক্ষতি করলেও পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর কাছে এটি ঐতিহ্য। জুমিয়ারা পাহাড়ে ধানের পাশাপাশি ভুট্টা, মরিচ, সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, মারফা, টক পাতাসহ বিভিন্ন রকম সবজির চাষ করে।
আলীকদম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন ইয়াকুব জানান, এ বছরে আলীকদম উপজেলায় আনুমানিক ছয় শত ও থানছি সাত শত হেক্টর পাহাড়ী জমিতে জুম চাষ হয়েছে যা আগের চেয়ে কমেছে। আমরা কৃষি বিভাগ জুমিয়াদেরকে আধুনিক পদ্ধতীতে চাষাবাদ করার জন্য পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, আদি পদ্ধতিতে জুম চাষের কারণে পাহাড়ের ক্ষয় হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জুম চাষ করা গেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। প্রযুক্তি যদি আরো ভালোভাবে সম্পসারণ করা যায় সে ক্ষেত্রে জুমিয়ারাও লাভবান হবে। এভাবে পরিমিত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে একই জমিতে প্রতিবছর জুম চাষ করা হলে পাহাড়ীদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে বলে আমি মনে করি।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ৪, ২০১৭ ২:৪৮ অপরাহ্ণ