নিজস্ব প্রতিবেদক :
জেলে বসেই হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলম। আর তার হুমকির কারণে খাদিজা বেগম নার্গিস কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
এক বছর আগের এই দিনে বদরুলের নৃশংস হামলার শিকার হয়েছিলেন খাদিজা। প্রকাশ্যে তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়।
এরপর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে সিআরপিতে যান। সেখানে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ করে বাড়ি ফেরেন খাদিজা।
এরপর তিনি কলেজে যাওয়া শুরু করেন। কিছু দিন পর বদরুলের লোকজন হুমকি দেওয়া শুরু করলে নিরাপত্তার কথা ভেবে কলেজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।
চাচা আব্দুল কুদ্দুসের মোবাইল ফোনে খাদিজা বলেন, ‘এখন অনেকটা সুস্থবোধ করেন। কিন্তু পা ও হাতে সমস্যা রয়ে গেছে।’
আলাপের এক পর্যায়ে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান তিনি। তাদের আশঙ্কা, যেকোনো সময় বদরুল তার লোক দিয়ে হামলা চালাতে পারেন। এজন্য কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন খাদিজা।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে বদরুল শেষ দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ফলে পড়ালেখার ইচ্ছা থাকলেও ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছি না।’
নৃশংস হামলার আগে থেকেই বদরুল হুমকি দিয়ে আসছিলেন জানিয়ে খাদিজা বলেন, ‘সত্যিই যে আমার জীবনে এমন ঘটনা ঘটবে স্বপ্নেও ভাবিনি।’
তবে আদালতের মাধ্যমে বদরুলের সাজা হওয়ায় খাদিজা সন্তুষ্ট বলে জানান। এখন তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।
খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস জানান, বদরুলের আপন ভাই নুরুল খাদিজা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রায় হুমকিধামকি দেয়। নুরুল সবাইকে বলে বেড়াই, ‘তার ভাই বদরুলের সঙ্গে অন্যায় করেছে খাদিজার পরিবার। এজন্য খাদিজার পরিবারকে দেখে নেওয়া হবে’।
নুরুলের এই হুমকির বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার কথা ভাবছেন খাদিজার পরিবার।
খাদিজার বড় ভাই শাহানুর হক শাহিন বলেন, ‘আমরা বাড়িতে খাদিজাকে সাধ্যমত নিরাপদে রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু, বদরুল ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি আসছে।’
তিনি বলেন, ‘জেলে বদরুলের সঙ্গে যার পরিচয় হয়, তাকেই নাকি বলেন- একবার জেল থেকে বের হতে পারলে খাদিজার শেষ দেখে নেব। জেল থেকে কেউ বের হলে তাদের বদরুল অনুরোধ করেন যেন এই হুমকির বার্তা খাদিজার পরিবারকে পৌঁছে দেওয়া হয়।’
খাদিজার চিকিৎসার বিষয়ে বড় ভাই শাহিন জানান, চলতি সপ্তাহেই ঢাকা আসবে খাদিজা। তার হাতে আরও একটা অস্ত্রোপচার করা হবে।
তিনি বলেন, ‘বদরুলের যে সাজা হয়েছে, তাতে আমরা খুশি। হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগেও যেন তার এই সাজা বহাল থাকে।’
২০১৬ সালের ৩ অক্টোবরে এমসি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিস।
পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর পথে প্রকাশ্যে তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম।
খাদিজাকে মাঠের মধ্যে ফেলে চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে বদরুলের কোপানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এরপর সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এ ঘটনার বিচার চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন।
ঘটনার সময় স্থানীয়রা বদরুলকে ধরে গণধোলাই দেন। পরে শাহপরান থানায় তাকে সোপর্দ করা হয়।
এ ঘটনায় খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে ওই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলায় বদরুলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেয়। এরপর ২০১৭ সালের ৮ মার্চ সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত বদরুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
বদরুল এখন কারাগারে আছেন। তবে এখনো তিনি রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেননি।
দৈনিক দেশজনতা/ এম জে