জামালপুর প্রতিবেদক: :
জামালপুরের ইসলামপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে সাব-কবলাকৃত ভোগদখলীয় বসতভিটায় প্রতিপক্ষকে ঘর উত্তোলন করতে সহায়তা করার অভিযোগ তুলেছেন ভূক্তভোগি এক কৃষক পরিবার। পুলিশের উদ্দেশ্যপনোদিত আচরণে পুলিশি আতঙ্কে বর্তমানে দিনাতিপাত করছে নিরিহ ওই কৃষক পরিবার। সোমবার (২ অক্টোবর) ভোরে ইসলামপুর পৌর এলাকার পশ্চিম পলবান্ধা গ্রামের এ ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা যায়, পশ্চিম পলবান্ধা গ্রামের কৃষক সুরুজ্জামানের সাথে পাশ্ববর্তী মজিবর রহমান টাকী গংদের জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে দীর্ঘ দিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষ জামালপুর আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেছেন।
সোমবার ভোরে মজিবর রহমান টাকী তার লোকজন নিয়ে জোরামূলে ওই বিরোধপূর্ন জমিতে একটি টিনসেড ঘর উত্তোলন করে। এতে সুরুজ্জামানের লোকজন বাধা দিলে হামলা করে মজিবর রহমান টাকীর লোকজন। এতে আহত হন সুরুজ্জামানসহ তার স্ত্রী গুলনাহার ও মেয়ে শিউলী। আহতদের ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভূক্তভোগি কৃষক সুরুজ্জামান জানান, তার বসতবাড়ী সংলগ্ন পলবান্ধা মৌজাধীন ২০৬ নং দাগে ৪১ শতাংশ ভূমি সাব-কবলা একাধিক দলিল মূলে প্রায় ৩০ বছর আগে থেকে ভোগদখল করে আসছেন। ঘটনার দিন অবৈধভাবে মজিবর রহমান টাকী ভাড়াটিয়া ভাড়াটিয়া অর্ধশতাধিক লোকজন নিয়ে তার বসত বাড়ির জমিতে ঘর উত্তোলন করেছে। তারা বাধা দিলে তাদের উপর হামলা চালায়। তিনি আরও জানান, এব্যাপারে ইসলামপুর পৌরসভা কার্যালয়ে একাধিক সালিশ-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সালিশানরা উক্ত জমি আমার নামে নিষ্কন্টক রয়েছে মর্মে রায় দিয়েছেন। এ সত্ত্বেও মজিবর রহমান টাকী গংরা আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে জমি জবরদখলের পায়তারা করছে।
সুরুজ্জামানের ভাগিনা এনামুল হক জানান, সোমবার ভোরে ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে তাদের বসত বাড়ির জমিতে মজিবর রহমান টাকী ঘর উত্তোলন করতে গেলে আইনগত সহায়তা পেতে তিনি দ্রুত ইসলামপুর থানায় যান। এসআই মোবারক হোসেন তাকে একটি লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। তিন শত টাকায় দিয়ে থানার রাইটারের কাছে তিনি অভিযোগ লিখে নেন। এরপর এসআই মোবারক হোসেন তার কাছে পাঁচ শত টাকা চেয়ে নেন। এরপর দুইজন পুলিশ সদস্য নিয়ে এসআই মোবারক হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে মোড় ঘুরে যায় এসআই মোবারক হোসেনের। তিনি পক্ষ নেন জোরামূলে বসতভিটায় ঘর উত্তোলনকারী মজিবর রহমান টাকীকে। তাদের জমিতে প্রতিপক্ষদের উত্তোলনকৃত ঘরে থাকতে বলেন। যদি তাদের ঘরে থাকতে কেউ বাধা দেয়। তাদের গ্রেফতার করা হবে বলেও হুশিয়ারি দেয় এসআই মোবারক হোসেন।
এনামুল হক আরও জানান, দুপুরে থানায় গেলে মামলা লেখার নামে তিন শত ও কাজ করে দেয়ার নামে ২৭শত টাকাসহ সর্বমোট সাড়ে তিন হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এসআই মোবারক হোসেন।
সুরুজ্জামানের বিবাহিত মেয়ে শিউলী জানান, (৩৫) প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হলেও আমাকে এসআই মোবারক হোসেন একাধিকবার অযথা শাসিয়েছে। যেন আমি নিজেই অপরাধী। এসআই মোবারক হোসেনের আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ।
সরেজমিনে জানা যায়, কৃষক সুরুজ্জামান প্রায় ৩০ বছর আগে তার বসতবাড়ী সংলগ্ন পলবান্ধা মৌজাধীন ৪১ শতাংশ ভূমি একাধিক সাব-কবলা দলিলমূলে ক্রয় করে। উক্ত জমিতে বিভিন্ন প্রকার বনজ ও ফসলি বৃক্ষরাজি চাষাবাদ করে ভোগদখল করে আসছেন। কয়েক বছর থেকে উক্ত জমি দখল করতে মজিবর রহমান টাকী গংরা নানাবিধ ফিকি-ফন্দি আঁটছেন। এতে অসহায় হয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করছেন ভূক্তভোগি ওই নিরিহ কৃষক পরিবার।
অভিযুক্ত মজিবর রহমান টাকীর যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমাদের জমিতে আমরা ঘর উত্তোলন করেছি। অন্য কারো জমিতে নয়।
অভিযুক্ত এসআই মোবারক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর