আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম’র প্রধান উইলিয়াম ল্যাসি সুইং বলেছেন, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া নারীরা যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেইসঙ্গে সংস্থাটি দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা ও মানসিক বিষয়ে সহায়তার উদ্যোগ নিচ্ছে।
জেনেভায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে সুইং বলেন, ‘কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ব্যাপক হারে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে বলে যে খবর আমরা পেয়েছি তাতে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও হতাশ। বিশেষ করে নারী ও মেয়েরা এবং পুরুষ ও ছোট ছেলেরাও এর শিকার হচ্ছে যাতে তারা আরো একবার শোষণ, নৃশংসতা ও অবমাননার শিকার হবেন।’ এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানকে মানবতাবিরোধী অপরাধ আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এ জন্য সংগঠনটি আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচারও দাবি করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের হত্যা-ধর্ষণসহ নিষ্ঠুরভাবে বিতাড়িত করার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে আসে। স্থানীয় সময় ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সচেতন রাষ্ট্রগুলোকে মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপ এবং দেশটিতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানায়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক মানবতাবিরোধী অপরাধ থামাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়। এইচআরডব্লিউ’র মতে, মিয়ানমারের কাছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দাবি করা উচিত যেন তাদের সাহায্যকারী সংস্থাগুলোকে রাখাইনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা যায়। এইচআরডব্লিউ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জোর দেওয়ারও আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে উত্থাপন করারও প্রস্তাব দেয় আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপিত হলে ওই অপরাধের বিচার অভিযুক্ত দেশের বাইরেও হতে পারে। নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এর বিচার করার সুযোগ রয়েছে। এইচআরডব্লিউ’র গবেষণাতে বলা হয়, স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপরাধ ও জোর করে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার দৃশ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া চার লাখেরও বেশি শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে রাখাইনে চলমান হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিষয়ে রোমহর্ষক তথ্য পাওয়া যায়। রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী যেটা চালাচ্ছে সেটা আন্তর্জাতিক আইনে জাতিগত নিধনের পর্যায়ে পড়ে।
গত ২৫ আগস্ট উত্তর রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি ও সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরসা’র হামলার অভিযোগে রাখাইনে জাতিগত ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর ফলে প্রায় অর্ধেক রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যায়। মানধিকার সংগঠনগুলো জানায় এই অভিযানে কমপক্ষে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হন। অসংখ্য নারী ও শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এইচআরডব্লিউ তার প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করে, মিয়ানমার সরকার গত ২০১২ সালের পর থেকেই রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর মানবতাবিরোধী অপরাধ করে আসছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি