আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রংপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক না থাকায় প্রায় ১৩ মাস ধরে বিচার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে সাড়ে ৬ হাজারের অধিক মামলার বিচারপ্রার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগের জন্যে ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রণালয়ে চিঠি ও আইনমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও কার্যত এর কোনো পদক্ষেপ দেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন আইনজীবী সমিতির সদস্যরা।
এছাড়া গত ২১ সেপ্টেম্বর নির্মিত রংপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিচারক সঙ্কটের বিষয়টি আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, খুব তাড়াতাড়ি আদালতে বিচারক সঙ্কটের বিষয়টি সমাধান করা হবে।
এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এ্যাডভোকেট খন্দকার রফিক হাছনাইন বলেন, গত ২০১৬ সালের ৬ জুন থেকে নারীও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিচারক নেই। এতে করে এই ট্রাইব্যুনালে অধিকাংশ মামলার শুনানী বন্ধ রয়েছে। ফলে মামলার নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হচ্ছে এবং বাদী ও আসামি পক্ষের মধ্যে জটিলতা বাড়ছে।
অপরদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (২) এর সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট মাকজিয়া হাসান দিবামনি জানান, বিচারক না থাকায় জামিন শুনানী হচ্ছে না। তবে এখন নিয়মিত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত (১) এর বিজ্ঞ বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের মামলার বিষয়টি দেখছেন।
আদালত চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘদিন বিচারক না থাকায় মামলাগুলোর শুনানী হচ্ছে না। এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০০৪ সালের মামলা নং ৪০০ বাদী রংপুর কোতয়ালী থানাধীন কামারপাড়া এলাকার একরামুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, নারী ও শিশু আদালতে বিচারক না থাকায় ১৩ বছর ধরে আমার মেয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হয়নি। এছাড়াও এই মামলায় এখন পর্যন্ত কোন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য নেয়া হয়নি। আমার আইনমন্ত্রীর কাছে দাবি খুব তাড়াতাড়ি নারী ও শিশু আদালতে বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করবে।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে কথা হয় মিঠাপুকুর উপজেলার ১৬নং মির্জাপুর রুহিয়া বানিয়াতপুর এলাকার শের আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৫ সালে ছোট রুহিয়া বিল এলাকার প্রায় ১৬ জন মৎস্যচাষী ইজারা নেই। ইজারা নেয়ার পর ওই বিলে মাছ চাষ করি। কিন্তু মাছ উত্তোলনের সময় মিঠাপুকুর ইসলামপুর এলাকার আবুল সর্দার ও তার লোকজন বাঁধা দেয়। এতে উভয় পক্ষে সংঘর্ষে প্রায় ৫০জন লোক আহত হয় এবং আবুল সর্দারের ছোট ভাই হাকিম সর্দার মারা যায়। পরে দিন আবুল সর্দার ২৪ জনকে আসামী করে রংপুর মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে যার জিআর নং ৭১। এই মামলায় আদালতে স্বাক্ষীরা না আসার কারণে ১৩ বছর ধরে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।
রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম মন্ডল জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দুইজন বিচারকসহ মোট ছয়জন বিচারক নেই। এতে করে বিচার কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও একজন বিচারকের পক্ষে একাধিক ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব পালন করা কষ্ট।
হিউম্যান রাইটস এণ্ড পিস ফর বাংলাদেশ রংপুরের কনভেনর এ্যাডভোকেট এম এ বাশার বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল একটি গুরুত্বপূর্ণ আদালত। এই আদালতে দেড় বছর থেকে বিচারক না থাকায় মামলায় জট সৃষ্টি হচ্ছে। মামলার স্বাক্ষীরা আদালত থেকে ফিরে যাচ্ছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ