নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের ৪১৪ নম্বর কক্ষ। উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার আগে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের ঠিকানা ছিল এ রুমটি। দায়িত্বে থাকাকালীন আট বছরেরও বেশি সময় এ রুমটি তাঁর নামেই বরাদ্দ ছিল। তবে উপাচার্যের দায়িত্ব ছেড়ে লেকচার থিয়েটারে না ফিরে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসের পাশে ২২৯ নম্বর রুমে বসছেন তিনি। যদিও কয়েকদিন আগেও সামাজিক বিজ্ঞান সাইবার সেন্টার হিসেবে ব্যবহূত হত কক্ষটি। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষকদের রুম বরাদ্দের নিয়ম ভঙ্গ করে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া সাইবার সেন্টারটি অনেকটা তড়িগড়ি করে খালি করে আরেফিন সিদ্দিককে রুম হিসাবে ব্যবহার করতে দেন।
সাইবার সেন্টার খালি করে সাবেক উপাচার্যকে বিশেষ উপায়ে রুম করে দেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের মধ্যে। শিক্ষকদের মতে, ডিন অফিস থেকে সাইবার সেন্টার খালি করে আরেফিন সিদ্দিককে রুম বরাদ্দ দেয়ার ফলে একদিকে যেমন রুম বরাদ্দের নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে, পাশাপাশি সাইবার সেন্টার স্থানান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের অপচয় হয়েছে।
শিক্ষকদের রুম বরাদ্দ দেয়ার প্রসঙ্গে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত একাধিক বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রুমের প্রয়োজন হলে একজন শিক্ষক তা বিভাগীয় প্রধানকে লিখিতভাবে জানাবে। পরবর্তীতে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভার মাধ্যমে শিক্ষককে রুম বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও আরেফিন সিদ্দিককে রুম বরাদ্দে এ ধরণের কোন নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি।
ড. আরেফিন সিদ্দিক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান বলেন, বিভাগের পক্ষ থেকে আরেফিন স্যারের জন্য লেকচার থিয়েটারের ৪১৪ নম্বর রুম বরাদ্দ রয়েছে। এখন ডিন অফিসের পক্ষ থেকে তাঁকে বর্তমানের রুম দেয়া হয়েছে। এতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেকচার থিয়েটারে লিফট নাই তো তাই ওনার যেন কষ্ট না হয়, হয়তো বা সেজন্য দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের দ্বিতীয় তলায় ডিন অফিসের পাশে সাইবার সেন্টার ছিল। কিন্তু বর্তমানে সাইবার সেন্টার নাম মুছে সেখানে আরেফিন সিদ্দিকের নাম লিখে দেয়া হয়েছে। আর লেকচার থিয়েটার ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ৪১৪ নম্বর রুমটি তালাবদ্ধ। রুমটি দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহৃত হয় না বলে জানান দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত আগস্ট মাসে আইসিটি সলিউশন বিডি ডট কম প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৮ হাজার ৮১০ টাকা ব্যয় করে সামাজিক বিজ্ঞান সাইবার সেন্টারটিতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির স্থাপন করা হয়। এর এক মাসের মাথায় সাইবার সেন্টার স্থানান্তরের জন্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর যন্ত্রাংশ পুনঃস্থাপনের জন্য আরো ১৬ হাজার ৬ শত ৪২ টাকা খরচ করা হয়। এটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারের অর্থ অপচয় হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, আবেদন করায় স্যারকে রুম দেওয়া হয়েছে। অন্য জায়গায় রুম রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য কোথাও রুম থাকলে আমি তা জানিনা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আগের রুমটি বিভাগকে দিয়ে দিয়েছি। আপনি আবেদন করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হন।