শিল্প–সাহিত্য ডেস্ক:
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী বুধবার। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীরা স্মরণ করছে তাকে।
এর মধ্যে বিকেল ৫টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। সেখানে আবৃত্তি পরিবেশনায় থাকবে দেশ অপেরা। আবৃত্তিসন্ধ্যা উদ্বোধন করবেন সৈয়দ হকের সহধর্মিণী কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
সৈয়দ হকের জন্মস্থান কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রয়াত লেখককে নিয়ে প্রাঙ্গণেমোর থিয়েটার নির্মাণ করেছে প্রামাণ্যচিত্র ‘মোহরঝরা সোনার কলমওয়ালা একজন’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রদর্শিত হবে প্রামাণ্যচিত্রটি। এছাড়া প্রাঙ্গণেমোরের ৮ম প্রযোজনা সৈয়দ শামসুল হকের লেখা নিরীক্ষাধর্মী কাব্যনাটক ‘ঈর্ষা’ মঞ্চায়িত হবে।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় প্রথম প্রয়াণবর্ষ অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিল্প-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে চারুলিপি প্রকাশনা থেকে ‘ফুলের গন্ধের মতো থেকে যাব’ সৈয়দ শামসুল হক স্মারকগ্রন্থ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘তুমি আসবে বলে’ সৈয়দ শামসুল হকের গানের বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচিত হয়।
২০১৬ সালের এপ্রিলে সৈয়দ শামসুল হকের ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়া হয় লন্ডনে। সেখানের রয়াল মার্সডেন হাসপাতালে পাঁচ মাস চিকিৎসা চলে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন না হলে ঢাকায় এসে ভর্তি হন ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এ গুণী ব্যক্তিত্ব। তার ইচ্ছানুসারে কুড়িগ্রামে সরকারি কলেজের পাশে সমাহিত করা হয় তাকে।
সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, চিত্রকলা, সংগীত, চিত্রনাট্য, অনুবাদ, সমালোচনাসহ সাহিত্যের সব শাখায় অবদান রেখেছেন তিনি।
উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘এক মহিলার ছবি’, ‘অনুপম দিন’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’, ‘স্মৃতিমেধ’, ‘মৃগয়া’, ‘এক যুবকের ছায়াপথ’, ‘বালিকার চন্দ্রযান’, ‘আয়না বিবির পালা’ প্রভৃতি। কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’, ‘বিরতিহীন উৎসব’, ‘প্রতিধ্বনিগণ’, ‘পরানের গহিন ভিতর’ উল্লেখযোগ্য। ছোটগল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘তাস’, ‘শীত বিকেল’, ‘রক্ত গোলাপ’ প্রভৃতি। তার চিত্রনাট্যে নির্মিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘মাটির পাহাড়’, ‘তোমার আমার’, ‘রাজা এল শহরে’, ‘শীত বিকেল’, ‘সুতরাং’ ও ‘কাগজের নৌকা’।
সৈয়দ হকের লেখা নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নূরলদীনের সারা জীবন’, ‘গণনায়ক’, ‘ঈর্ষা’, ‘নারীগণ’ ও ‘উত্তরবংশ’।
অগণিত পাঠকের ভালোবাসার পাশাপাশি দেশের প্রায় সব প্রধান পুরস্কারই অর্জন করেছেন সৈয়দ শামসুল হক। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, পদাবলী কবিতা পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক প্রভৃতি।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ