আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ রাখাইন রাজ্যে আরও ১৭ জন হিন্দুর গণকবর উদ্ধার হয়েছে। সোমবার সেই গণকবর উদ্ধার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি ‘রোহিঙ্গা মুসলিম সন্ত্রাসীরা’ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর আগের দিন মিয়ানমার সেনাবাহিনী ২৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করে সৎকারের ব্যবস্থা করে। খবর এএফপির।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি ও সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সংগঠন রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইনদের উপর কথিত ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করে। তাদের সঙ্গে উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা যোগ দেয়। এর ফলে প্রায় অর্ধেক রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। অসংখ্য নারী ও শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব এটাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করেছেন। মিয়ানমার সরকারের হিসেবে অভিযানে চার শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন নিরপেক্ষ মহলের মতে এটা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেনাদের সাথে উদ্ধারে যাওয়া নি মল নামে এক হিন্দু নেতা জানান, নতুন উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর বয়স ৩০ থেকে ৫০ এর মধ্যে। তাদেরকে দুটি গর্তে রাখা হয়েছিল। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা সেনা ও পুলিশদের সাথে আরও তল্লাশি চালাচ্ছি। আমাদের ধারণা অন্তত ১০০ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে।’
আরসার তরফ থেকে একটি বার্তায় মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর অভিযোগকে অস্বীকার করা হয়েছে। আরসার দাবি রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে এমন তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। হত্যাকাণ্ড গুলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীরই বলে পাল্টা অভিযোগ স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের। সংঘাতপূর্ণ রাখাইন প্রদেশে ঢুকতে সরকারি বাধার কারণে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করা যাচ্ছেনা।
রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রায় ৪০ শতাংশ গ্রাম সম্পূর্ণরূপে খালি হয়ে গেছে। এদিকে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা গত এক মাসে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের মতে ‘এত অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর কোথাও শরণার্থী সংকট প্রকট হয়ে উঠেনি।’ সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং সেটা সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর রাখাইন প্রদেশের বৌদ্ধ ও হিন্দুরা মনে করছে তাদের পক্ষে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাথে সহাবস্থান করা অসম্ভব।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি