নিজস্ব প্রতিবেদক:
নীলফামারীর কৃষকদের চোখে-মুখে এখন আনন্দের বন্যা। আগাম আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। অথচ বেশ কিছু দিন আগেও জেলার কৃষকেরা ছিলো দিশেহারা। দু’দফা বন্যা ও গত বোরো মৌসুমে ব্লাস্ট রোগ কৃষকের মেরুদন্ড প্রায় ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু আগাম আমন কাটা শুরু হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে কৃষকের মনে। বর্তমানে চালের বাজার চড়া এ সময় ধান পেয়ে আনন্দে আত্মহারা এসব কৃষকেরা। তাছাড়া আগাম ধান উঠায় এসব জমিতে আলু, ভুট্টা আবাদও করতে পারবে তারা। বলা যায় এক ফসলি জমি এখন তিন ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে।
পুরোপুরি ভাবে আমন ধান পাকতে এখনো এক থেকে দেড় মাস সময় বাকী রয়েছে। কিন্তু জেলা সদর, জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা বেশ কিছু জমিতে লাগানো চায়না ও হাইব্রিড জাতের আমন ধান কাটতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনেকের ঘরে ইতোমধ্যে ধান উঠেও গেছে। অসময়ে আগাম ধান আবাদের ফলে বর্তমানে বাজারে চালের ও গো-খাদ্যেরও সামান্য হলেও সংকট মিটবে। বর্তমানে বাজারে চাল ও গো-খাদ্যের দাম চড়া। আগাম ধান পাওয়ায় চাল ও খড়ের চড়া মূল্যও পাচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলার চাঁদখানা এলাকার কৃষক আকবর আলী, দুলাল হোসেন, আবির হোসেন জানান, আমরা আগাম জাতের আমন আবাদ করেছিলাম। বন্যায় ও তেমন একটি ক্ষতি হয়নি। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ১৫ থেকে ১৭ মণ পর্যন্ত ধান পেয়েছি। বর্তমানে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৮০ টাকা। খড়ের দামও চড়া। এছাড়া আমরা আলু ও ভুট্টা আবাদের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল হান্নান সম্প্রতি চাঁদখানা ইউনিয়নের আগাম ধান কাটা দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, দু’দফা বন্যার পরেও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কৃষক আগাম জাতের ধান আবাদ করে ভাল দাম পাচ্ছে। তাছাড়া এই সংকটে এই ধান কিছুটা হলেও বাজারে প্রভাব ফেলবে। তিনি আরো বলেন, এটি আমাদের একটি সাফল্যও বলা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, আমাদের কর্মীদের পরামর্শে কৃষকরা আগাম জাতের ধান লাগিয়ে সুফল পেয়েছে। এজন্য আমরাও আনন্দিত। আমরা তাদেরকে সার্বক্ষণিক নজরদারীতে রেখেছিলাম বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
এবার নীলফামারী জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ১২হাজার ৮০১ হেক্টর জমিতে এরমধ্যে আগাম জাতের ধানের চাষ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হবে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন ধান।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ