২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:২৭

ধর্ষণের পর রোহিঙ্গা নারীদের গোপনাঙ্গে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দেয় মিয়ানমারবাহিনী

দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:  

বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে গত কয়েক সপ্তাহে মিয়ানমার ছেড়ে অন্তত আট লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম ঢুকেছেন। তাঁদের মধ্যে মহিলাদের অবস্থা ভয়াবহ। তেমন দৃশ্যই উঠে এসেছে জাতিসংঘ থেকে আসা চিকিৎসকদের বয়ান থেকে। চিকিৎসকদের অভিযোগ, মিয়ানমারবাহিনীর অত্যাচারে ওই মহিলাদের অনেকেই পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের জখম শরীরে যে ধরনের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে চিকিৎসকরা নিশ্চিত, ওই মহিলারা ভয়ঙ্কর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কাউকে যৌন নিগ্রহ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার গণধর্ষণের বিভীষিকার মুখোমুখি হয়েছেন।
মিয়ানমার প্রশাসন অবশ্য নিজেদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সব অভিযোগই উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের পাল্টা দাবি, ‘রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠন সেনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। সেনা মিয়ানমারে নাগরিকদের সুরক্ষায় কাজ করছে।’ দেশের সরকারের পরামর্শদাতা এবং অন্যতম নেত্রী আউং সান সুচি-র মুখপাত্র জও হিতায়ে বলেছেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে থাকলে তার তদন্ত করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘যে মহিলারা ধর্ষণের শিকার, তাঁরা আমাদের কাছে এসে অভিযোগ জানান। তদন্তে যা বেরোবে, সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সু চি অবশ্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে চুপ।
সংবাদ সংস্থা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আট জন স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে। এ বছরের অগস্টের শেষ থেকে ওই কর্মীরা অন্তত ২৫ জন ধর্ষিতার শুশ্রূষা করেছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত মহিলাদের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল, তা হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু অত্যাচারের ধরনটা যেন একই রকম! আর ওই মহিলারা প্রত্যেকে জানিয়েছেন, মায়ানমারের সেনারাই এর জন্য দায়ী। সাধারণত এ ধরনের ‘সঙ্কটে’ জাতিসংঘ থেকে আসা চিকিৎসকদের বড় একটা মুখ খুলতে দেখা যায় না। লেডা নামে একটি শিবিরের ডাক্তাররা বলেছেন, একশোর বেশি মহিলার চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে তাঁদের সঙ্গে ভয়ঙ্কর যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। অভিযুক্তরা মহিলাদের ওপরে আরও নির্যাতন করতে হবে এমন একটা লক্ষ্য নিয়ে যেন চড়াও হয়েছিল। গত অক্টোবরে রাখাইন প্রদেশে ঝামেলা শুরু হওয়ার পরে পুরুষরাই মূলত ঘর ছেড়েছিলেন। মহিলাদের মনে হয়েছিল, সেনা রোহিঙ্গা পুরুষদের ওপরে খাপ্পা। কিন্তু এ বার সে হিসেব আর কাজ করেনি।

চিকিৎসকরা ২০ বছরের এক তরুণীর কথা জানিয়েছেন। ১০ সেপ্টেম্বর যাঁর চিকিৎসা হয়। মেয়েটির দাবি চুল ধরে হিঁচড়ে টেনে বন্দুক দিয়ে পিটিয়ে মায়ানমারের সেনা তাঁকে ধর্ষণ করে। ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের শরীরে এই রকমই চিহ্ন মিলেছে। কারও ক্ষেত্রে গোপনাঙ্গে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দেওয়া, কারও ক্ষেত্রে গোপনাঙ্গ কেটে দেওয়া, চামড়ায় কামড়ের দাগ শরীরে এমন অমানবিক আঘাত শরীর জুড়ে। চিকিৎসকরা এই আঘাতের সঙ্গে আক্রান্তের বয়ান মেলাতে গিয়ে দেখছেন, অনেক ক্ষেত্রেই হুবহু মিলে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে রিপোর্টও তৈরি করছেন।
সু চি-র মুখে দেশের জাতি সংঘর্ষে অনেক সময়েই ধর্ষণ অস্ত্র হয়ে উঠছে ক্ষমতায় আসার আগে ২০১১ সালে শোনা গিয়েছিল। এখন অবশ্য তাঁর কিছুই বলার নেই। আইন এ বার কোন পথে এগোবে? জানতে আগ্রহী বিশ্ব।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭ ২:১২ অপরাহ্ণ