বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক :
অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সেলফোন ট্র্যাকিং করে পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থা। প্রচলিত আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের বৈধতা রাখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন অপরাধীদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সেলফোন ট্র্যাকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আমাদের দেশে ট্র্যাকিং করার সময় পুলিশ সেল মোবাইল ফোন অপারেটরের সাহায্য নিয়ে থাকে। অপারেটরদের কাছ থেকে পুলিশ সম্ভাব্য অপরাধীর মোবাইল নম্বরের কলরেকর্ড, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও সর্বশেষ লোকেশন জানতে চায়।
অপরাধীর নম্বরটি যদি রেজিস্ট্রেশন করানো থাকে তাহলে তার অবস্থান শনাক্ত করতে দেরি হয়না। এছাড়া সে সর্বশেষ কোন কোন নম্বরে যোগাযোগ করেছে সেই সব নম্বরে যোগাযোগ করেও অপরাধীর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এছাড়া দেশের স্যাটেলাইট থেকে লাইভ ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে অপরাধীদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে ওই সিস্টেমের মাধ্যমে অপরাধীর মোবাইল ফোনের সিগ্যাল অনুসরণ করা হয়। ফোনটি যে অঞ্চলে রয়েছে, সেই অঞ্চলের নিকটবর্তী টাওয়ার থেকে সিগন্যাল প্রেরিত হয়ে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তাদের সিস্টেমে লোকেশন ট্র্যাক হয়ে যায়।
যদি অপরাধী তার মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে দিয়ে রাখে সেক্ষেত্রেও তা ট্র্যাক করা সম্ভব। সেলফোন অপারেটিং সিস্টেমের দুইটি দিক থাকে। একটি দিক যেটা ফোন এবং নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয়, আরেকটি দিক হলো ফোনের ইউজার ইন্টারফেস।
ইউজার ইন্টারফেসে যতোই দেখাক, ফোনটি এয়ারপ্লেন মোডে রয়েছে, তারপরও সেটি নেটওয়ার্ক থেকে পিং গ্রহণ করে। আর নেটওয়ার্ক চাইলে সেই সময়ও গুরুত্বপূর্ণ লোকেশন তথ্য ফোন থেকে নেয়া যেতে পারে। আর ফোনটি অন থাকলে এতে ফোর্স ২জি চালু করে দেয়া হয়। কেননা ২জি’তে এনক্রিপশন অনেক দুর্বল, তাই সহজেই পুলিশ ওই ফোন থেকে আরো প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যেতে পারে।
সেলফোন ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে ফোনে থাকা জিপিএস অনেক বেশি সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অপরাধী যদি কোনো স্মার্টফোন ব্যবহার করে আর তাতে যদি জিপিএস লাগানো থাকে তবে পুলিশের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। জিপিএস থাকলে সেল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ না করেও ফোনের লোকেশন পাওয়া সম্ভব।
পুলিশের কাছে কিছু সিস্টেম সেটআপ থাকে, যার মাধ্যমে তারা ফোনের জিপিএস থেকে অ্যাক্সেস নিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের পুলিশ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে জিপিএস ট্র্যাকিং করে। বড় বড় দেশের কাছে সরাসরি স্যাটেলাইট অ্যাক্সেস থাকে, ফলে তারা সহজেই তথ্য পেয়ে যায়।
যেভাবে হ্যাকাররা ফোন ট্র্যাক করে
শুধু অপরাধীদের নয়, সাধারণ মানুষের মোবাইলও ট্র্যাক হতে পারে। আর এটা করতে পারে হ্যাকাররা। প্রাইভেসি নষ্ট করার জন্যই সাধারণত হ্যাকাররা ফোন ট্র্যাক করে থাকে। শুধু তাই নয় ট্র্যাকিংয়ের পর তারা ফোনের কল রেকর্ড, ম্যাসেজ, কন্টাক্ট লিস্ট, ইমেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, অনলাইন অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি সহ সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে। যা ব্যবহারকারী টেরও পাবেন না।
হ্যাকার মূলত ব্যবহারকারীকে ঠকিয়ে তার ফোনে ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে দেয়। এই ধরনের ম্যালওয়্যারকে মূলত স্পাইওয়্যারও বলা হয়। এই প্রোগ্রামগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে এটি ব্যবহারকারীর ফোনের সিস্টেমে লুকিয়ে কাজ করতে পারে এবং সকল তথ্য হ্যাকার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
হ্যাকাররা ইমেইল করে, ওয়েবসাইট থেকে, ফেক কল করে, অথবা ফিজিক্যালি ব্যবহারকারীর ফোনে এই ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করতে পারে। আবার ব্যবহারকারী নিজেই অন্য কাজের জন্য কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করেও হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারেন।
হ্যাকারদের সেলফোন ট্র্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়:
সেলফোন হ্যাকিং থেকে বাঁচতে ফোনে সিকিউরিটি লক ব্যবহার করা যেতে পারে। যেটাকে স্ক্রিন লকও বলা হয়। কারণ হতেই পারে হ্যাকার নিজেই ব্যবহারকারীর ফোনে ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে দিলেন।
দ্বিতীয়ত; ফোন কখনোই রুট করা যাবেনা। কেনোনা এধরনের অ্যাপ কাজ করার জন্য বেশিরভাগ সময়ই ফোনে রুট অ্যাক্সেসের ডিম্যান্ড করে।
তৃতীয়ত; কোনো অনাকাঙ্খিত মেইল বা ম্যাসেজ ওপেন করা যাবে না। ওই মেইলে যদি কোনো লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট থাকে সেটাতেও ক্লিক করা যাবেনা। মেইলটি ওপেন করার আগে ভালভাবে যাচাই করে নিতে হবে।
চতুর্থত; গুগল প্লে স্টোর বাদে অন্য কোনো সোর্স থেকে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর ফোনে অ্যাপ ইন্সটল করার আগে বা ইন্সটল থাকা অ্যাপসগুলোর পারমিশন চেক করে যাচাই করতে হবে যে সেটি অযথা পারমিশন ডিমান্ড করছে কিনা।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ