নিজস্ব প্রতিবেদক:
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বিচার বিভাগ-সরকার বাহাস: বাংলাদেশে আইনের শাসনের ভবিষ্যত’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে মোশাররফ এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে কোনো ঐক্য নয়।’
শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপি নেতা মোশাররফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমাদের দল না কি সন্ত্রাসী দল। একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ রকম বক্তব্য দুঃখজনক। বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এ দল পাঁচবার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিকভাবে সরকার একা হয়ে গেছে এমন মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমরা এ সংকটে সরকারের কাছে জাতীয় ঐক্যর আহ্বান জানিয়েছি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
মোশাররফ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কোনো দেশ তাদের সহায়তা করছে না। তখন আমরা সরকারের কাছে জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রস্তাব নিয়ে গেছি কিন্তু তারা তাতে সাড়া দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ভারত সফর করে প্রধানমন্ত্রী বললেন-আমাদের সঙ্গে ভারতের সঙ্গে হিমালয় সমান কূটনৈতিক সম্পর্ক। চীন থেকে ফিরে বলেছিলেন, চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আকাশ ছোঁয়া। কোথায় তাদের সেই কূটনৈতিক সম্পর্ক। ভারত আর চীন সরকার রোহিঙ্গা বিষয় সরকারকে কোনো সহায়তা করছে না। ভারত মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে এবং তাদের দেশে কোনো শরণার্থী ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়তো রোহিঙ্গা বিষয়ে এমন কোনো কথা বলেছেন যে কারণে শেখ হাসিনা বললেন রোহিঙ্গা বিষয় আমেরিকার কাছে কিছু আশা করেন না। তাই আমরা মনে করি এই সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য জরুরি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সিনিয়র সদস্য বলেন, ‘মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের স্থায়ীভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। যেটা ১৯৭৮ সনে জিয়াউর রহমানের সময় হয়েছে। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় হয়েছে।’
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, রায়ে যে বিষয়গুলো বলা হয়েছে তাতে সরকারের গায়ে লেগেছে। তারা নিজেরাই এটাকে গায়ে লাগিয়েছে। রায়ের পর সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বিচার বিভাগকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। তারা ব্যক্তিগতভাবে প্রধান বিচারপতিকে আক্রমণ করে কথা বলছে।
সরকার এখন উচ্চ আদালতকে হুমকি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছে- এমন অভিযোগ করে ড. মোশাররফ সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে আপনারা আপিল করতে পারেন। কিন্তু সেটা না করে আপনারা আদালতকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এখন যদি আপিলে এই রায়ের কোনো পরিবর্তন হয় তাহলে কি আমরা মনে করবো চাপের কারণে বিচারকরা রায় পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনটা হলে আইনের শাসনের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট আব পলিটিক্স স্টাডিজ (বিপস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতি করেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিপসের সভাপতি ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। আরো বক্তব্য রাখেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, ড. দিলারা চৌধুরী, সৈয়দ ইবরাহীম বীর প্রতীক প্রমুখ।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ