বরিশাল প্রতিনিধি:
সারাদেশের মতো বরিশালেও চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকারের কঠোর নজরদারি ও মিল মালিকদের উপর চাপ অব্যাহত থাকায় বাড়তি দাম কিছুটা হলেও কমতে শুরু করেছে। তবে বাজারে থাকা ৮-১০ জাতের চালের মধ্যে দুই-এক জাতের চাল কেজি প্রতি ১ থেকে দেড় টাকা কমেছে। বাদ বাকি চালের দর না বেড়ে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তবে বরিশাল নগরীর চাল ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এসব চালের দর কমতির সম্ভাবনা আপাতত নেই।
চাল ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের ১৫ দিন আগে থেকে এ যাবত প্রতিকেজি চাল ৮-১০ টাকা করে বেড়েছে। দর বাড়ার নেপথ্যে রয়েছে বর্তমানে নতুন কোনো ধানের মৌসুম না থাকা, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি এবং ভারত থেকে স্বর্ণা বুলেট (মোটা) চালের বাড়তি মূলে ক্রয় করাসহ নানা কারণ। এছাড়া পূজার বন্ধে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমদানি বন্ধ থাকায় সামনের দিনগুলোতে চালের দাম কমার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
চাল ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের মিল মালিকরা ধানের মৌসুমে ধান সংগ্রহ করেন। তারা বাজারে কখন কি পরিমাণ চাল ছাড়বে তার উপর চালের বাজার অনেকাংশে নির্ভরশীল। এছাড়াও সরকার কৃষকদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ধান সংগ্রহ না করে মিল মালিকদের কাছ থেকেই ধান সংগ্রহ করেন যার কারণে চালের বাজারে আধিপত্য মিল মালিকদেরই হাতেই থেকে যায়। এসব মিল মালিকরা উত্তর ও পশ্চিমবঙ্গের ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, বগুড়া, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, ও রংপুর অঞ্চলের।
চাল ব্যবসায়ীরা আরো জানায়, এখন আশ্বিন মাস চললেও আগামী অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তুলবে। তবে বরিশালসহ সারা বাংলাদেশে যা আমন ফসল উৎপাদিত হয় তা চাহিদার চেয়ে খুবই কম। যার কারণে এই আমন চাল কয়েক মাসের মধ্যে বাজারে আর পাওয়া যায় না। এছাড়া গেল ভাদ্র মাসে আউশ মৌসুমে যে ধান উৎপাদন হয়েছে তা মুড়ি তৈরিতেই কিনে নিয়ে গেছে ব্যবসায়ীরা। এটা সামান্য ফলন হয় বলে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনোভাবে প্রভাব রাখতে পারছে না। এক্ষেত্রে বৈশাখ মাসে বোরো মৌসুমে সারা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদিত হয়। এ সময় বালাম, মিনিকেট ও বুলেট (মোটা) ৬-৭ জাতের জাতের অধিক ধান উৎপাদিত হয়। যা বছর জুড়েই নির্ভরশীল থাকে পুরো বাংলাদেশ। আর এসব চাল শতকরা ৫০ ভাগ বরিশালের মানুষ খেতে অভ্যস্ত । আর আমন জাতের চাল শতকরা ১০ ভাগ এবং ভারত থেকে আমদানি করা স্বর্ণা বুলেট চালের চাহিদা ২০ ভাগ মানুষের রয়েছে।
এদিকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে মাধ্যমে খোলা বাজারের সিদ্ধ চাল না দিয়ে আতপ চাল বিক্রি কারায় বরিশালের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রভাব পড়ছে না। ঈদের পনের দিন আগে যে মিনিকেট চাল বিক্রি হত ৫১ টাকা দরে তা বর্তমানে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড চিকন-২৮,২৭ ও অন্যান্য একই জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৩-৫৪ টাকা কেজি দরে। হাইব্রিড মোটা বুলেট বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকায়। ভারত থেকে আমদানিকৃত স্বর্ণা বুলেট বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৮ টাকায়। এছাড়া অপরিবর্তিত আছে অন্যান্য চালের দাম।
বরিশাল ফরিয়াপট্টিতে চাল ক্রয় করতে আসা বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ খাইটা-পুইটা খাই। আগে চাউলের দাম কম ছিল ভাত বেশি খাইতাম। এহন চাইলের দাম বাইড়া যাওয়ায় বাজার থেইকা চাউল কম নেই। তাই ঘরের কর্তী ভাত রান্ধে কম, ভাত খাইও কম।’ চাল ক্রেতা মহিউদ্দিন বলেন, ‘ঘরে ৫-৬ জনের লইগা চাউল লাগে ৩ কেজি। এহন বাজারে আইয়া দেহি চালের দাম চায় ৪৫-৫০ টাহা। এহন কি রহম যে আমি বাচমু কইতে পারছি না।’
বরিশাল ফরিয়াপট্টি চালের আড়ৎদার মো. রানা জানান, উত্তরাঞ্চলে বন্যার পর থেকে চালের দাম বেড়ে গেছে। ঈদের আগে যে চাল ৩৭ টাকা ছিল সেই চাল এখন ৪৭ টাকা। আমরা যারা মিল মালিকদের থেকে চাল কিনি তারা ঠিকমতো চাল দিচ্ছে না। আর ভারত থেকে যে চাল আমদানি হয় সেই চাল প্রতিদিন বেড়েই চলছে। নগরীর ফরিয়াপট্টি মা-ভাণ্ডারের চাল ব্যবসায়ী কমল সাহা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে নতুন ধান উঠার কোনো মৌসুম না থাকায় চালের দাম তেমন কমার সম্ভাবনাও নেই। সামনের অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিকে নতুন আমন ধান বাজারে এলে চালের দাম কমে যাবে।’
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি