নিজস্ব প্রতিবেদক:
অনাবাদি জমি আর লবণাক্তটার কারণে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলায় দিন দিন বাগদা চিংড়ি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যে কোনো পুকুর বা বদ্ধ জলাশয়ে নোনাপানি সংরক্ষণ করে খুব সহজেই এই চিংড়ির উৎপাদন করা সম্ভব। আর মাত্র তিন মাসে এ মাছ রেনুপোনা থেকে বিক্রির উপযোগী হয়। এছাড়া জেলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী থেকে খুব সহজেই বাগদা রেনু সংগ্রহ করা সম্ভব। ফলে এই সহজ লভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে উপকূলের মানুষ বাণিজ্যিকভাবে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন শুরু করেছে। যা কিনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
সরেজমিনে ভোলার মনপুরা ও চরফ্যাসনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় ইতিমধ্যে শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে গলদা চিংড়ির উৎপাদন শুরু করেছে। অনাবাদি জমি, পুকুর অথবা জলাশয়ে নোনাপানি সংরক্ষণ করে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়। জোয়ার ভাটার পানি সরবরাহের জন্য আলাদাভাবে সরু ড্রেন থাকে। যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পানি আসা যাওয়া করতে পারে। আর মাত্র ৩ মাসেই বাগদা রেনু গ্রেড চিংড়িতে পরিণত হয় বলে জানান চাষিরা।
এ সময় কথা হয় চরনিউটনের চিংড়ি চাষি নুরে আলমের সাথে। পরিকল্পিত ভাবে ঘের করে বাণিজ্যিকভাবে বাগদা চিংড়ি চাষ করে লাভবানও হচ্ছেন বলে তিনি জানান। তার দেখাদেখি অনেকে বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। এছাড়া অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরাও বাগদা চিংড়ি চাষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে বলে জানান তিনি।
চরফ্যাসনের বিচ্ছিন্ন কুকরী মুকরী ইউনিয়নের চরপাতিলার মৎস্যজীবী আলাউদ্দিন জানান, মশারী জাল, নেট, ঠেলা জালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা আটকা পরে। যেমন হরিনা, মটকা, চাকা, কুছো, কাকড়া, বেলে, পাইর্সা, ভেটকি, গলদা রেনুসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সেখান থেকে ঝিনুকের সাহায্যে গলদা চিংড়ির সরু রেনু সংগ্রহ করা হয়।
ঢালচরের মৎসব্যবসায়ী আবুল কালাম বেপারী জানান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও ক্লাইমেট কেয়ার সেন্টারে মৎস্য চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি চিংড়ি চাষ শুরু করেন। নদীর অদূরেই জলাশয় লিজ নিয়ে চারদিকে উচু বাঁধ দিয়ে চুন ও সার দিয়ে লবণাক্ত নোনাপানি সংরক্ষণ করে বাগদা চিংড়ি চাষের খামার তৈরী করেন তিনি। সেখানে নদী থেকে সংরক্ষণ করা রেনু ছেড়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিতে শুরু করেন। মাত্র ৩ মাস পরে সেই রেনুপোনা গ্রেড চিংড়িতে পরিণত হয়। তার খামারের মাছ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ মূলত আধানিবিড় পদ্ধতিকেই বুঝায়। আধানিবিড় পদ্ধতিটি হচ্ছে স্বল্প জমিতে অধিক চাষ। যাকে ইংরেজিতে সেমি ইন্টেন্সি বলা হয়। এক হেক্টর (সাড়ে ৭ বিঘা) জমিতে আধানিবিড় পদ্ধতির চাষে ৫-৬ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। তাই স্বল্প জমিতে পুকুর কেটে এ পদ্ধতির চাষ বেশ সুবিধা ও লাভজনক।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ