শিল্প–সাহিত্য ডেস্ক:
বিশিষ্ট গবেষক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল আহসান চৌধুরী বলেছেন, শিল্পী আব্দুল জবারের কন্ঠের মধ্যদিয়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীকার চেতনা, জাতীয়তাবোধ, আবহমান বাংলার শুদ্ধ সংগীত, কাল থেকে কালান্তরে মানুষের মনকে, হৃদয়কে উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, আব্দুল জব্বার তাঁর জীবনদশায় কুষ্টিয়াতে একটি সংগীত চর্চাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই আশা পুরন হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংগীত শিল্পীদের মধ্যে আব্দুল জব্বারের মত অবদান কখনো কারো ছিলনা। তাঁর সাথে বিভিন্ন সময়ে আলাপচারিতায় আমরা লক্ষ্য করেছি যে, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য জাতীয় শিল্পীর মর্যাদা চেয়েছিলেন। তিনি অভিমান করে বলতেন বাবা (বঙ্গবন্ধু) বেঁচে থাকলে অবশ্যই আমি এই মর্যাদা পেতাম। এই মর্যাদা না পাওয়ার বেদনা নিয়েই তিনি চিরবিদায় নিলেন। আমরা মনেকরি জাতীয় শিল্পীর মর্যাদা একমাত্র আব্দুল জব্বারই পেতে পারেন। তাঁকে মরণোত্তর জাতীয় শিল্পীর মর্যাদা দেয়ার দাবী জানাই।
বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার আয়োজনে কুষ্টিয়া পৌর অডিটোরিয়ামের মজিবর রহমান মিলনায়তে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জনপ্রিয় কন্ঠযোদ্ধা, স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতীয় শিল্পী, কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান আব্দুল জব্বারের স্মরণে নাগরিক স্মরণসভায় প্রধান
আলোচক হিসেবে আলোচনাকালে ড. আবুল আহসান চৌধুরী এসব কথা বলেন।
স্মরণসভায় সভাপতির বক্তৃতায় কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, শিল্পী আব্দুল জব্বার আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাঁর মৃত্যুতে এজাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, তাঁর নাম ততদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মেয়র বলেন, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শিল্পী আব্দুল জব্বারের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর শিল্পী আব্দুল জব্বার বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যুগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে “সালাম সালাম হাজার সালাম” ও “জয় বাংলা বাংলার জয়”সহ অংসখ্য গানে কন্ঠ দিয়েছেন। তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে সেসময় অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে তিনি কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধাদের ক্যাম্প ঘুরে হারমোনি বাঁজিয়ে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেছেন, যা মুক্তিযুদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছে। এছাড়াও তিনি সেসময় বিভিন্ন স্থানে গণসঙ্গীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ রুপি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন। মেয়র বলেন, তিনি একক প্রচেষ্টায় সমস্ত প্রতিকুল উপেক্ষা করে এই পর্যায় এসেছেন। তাঁর কৃতকর্মে আজ আমরা কুষ্টিয়াবাসী গৌরবাম্বিত।
স্মরণসভায় আলোচক হিসেবে আরও আলোচনা করেন কুষ্টিয়া বোধোদয়ের সভাপতি এ্যাডভোকেট লালিম হক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. সরওয়ার মূর্শেদ রতন। এছাড়াও পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শিল্পী আব্দুল জব্বারের নাতি আলতাফ হোসেন।
জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। শুরুতেই শিল্পী আব্দুল জব্বারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে একমিনিট নিরাবতা পালন করা হয়। সভা পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী দেবাশীষ বাগচী। অনুষ্ঠানে শিল্পী আব্দুল জব্বারের নিজের গাওয়া কিছু গান পরিবেশন করেন তাঁর ভাতিজা মতিয়ার রহমান পানু। এছাড়াও গান পরিবেশন করেন রফিকুল ইসলাম লাবু, রফিকুল ইসলাম ও খালিদ হোসেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ