নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘আত্মতুষ্টি’র কারণে পাসের হার বাড়িয়ে শিক্ষার ক্রমাবণতি ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া।
বিকালে শিক্ষা বিষয়ক দলের এক সেমিনারে বিএনপি চেয়ারপারসন এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ একথা আজ স্বীকার করতে হবে যে, আত্মতুষ্টির কারণে পাসের হার বাড়িয়ে আমাদের শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঘটেছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আগামী দিনে আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে, আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব।”
শিক্ষা প্রসারে তার দলের অবস্থান তুলে ধরে ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনায় শিক্ষাখাতে জিডিপি‘র শতকরা ৫ ভাগ ব্যয় করে দেশকে নিরক্ষরতার অভিসাপ ও অন্যান্য শিক্ষা সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়ার কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
‘‘ আমরা এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলব যাতে শিক্ষা শুধু ডিগ্রি অর্জনের হাতিয়ার হবে না, হবে জীবনে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার হাতিয়ার। সর্বোপরি শিক্ষা অর্জনের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জেন্ডার ও অর্থৈনৈতিক বাধাসমূহ দূর করা হবে।”
রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবের বিএনপির ‘বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার হয়। সকাল থেকে চার পর্বের এই সেমিনারে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, শিক্ষার বিভিন্ন ধারা, উচ্চ ও অগ্রসর শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা‘র ওপর আলোচনা সভা হয় যাতে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাবিদরা অংশ নেন। সকালে শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সেমিনারের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ।
সমাপনী অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান দিনব্যাপী সেমিনারের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ আমাদের জনসংখ্যা বয়সভিত্তিক কাঠামো যেভাবে বদলে যাচ্ছে তা মোকাবেলায় মূল কৌশল হবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা এবং আকর্ষনীয় চাকরির-বাজার সৃষ্টি করা। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রয়োজনীয় সেতুবন্ধন রচনা করা।”
‘‘ অগ্রসর জ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তি ও শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। মানবসম্পদ উন্নয়নের ব্যবহারিক জ্ঞান, তাত্ত্বিক জ্ঞান, প্রায়োগিক ও তাত্ত্বিক গবেষণাসহ সব ধরণের জ্ঞান চর্চার মধ্যে ভারসাম্য অর্জন করতে পারলে পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব।”
শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের কার্য্ক্রমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘ শিক্ষা মানুষকে গণতন্ত্রের প্রতি, ভিন্নমতের প্রতি, ভিন্নমত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শিক্ষার এই মৌলিক লক্ষ্যকে পদদলিত করেছে।বিরোধীমতের লোকজনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করছে। মোদ্দাকথা, শিক্ষার সকল উদ্দেশ্য আজ ভুন্ঠিত।”
‘‘ সুশাসন, আইনের শাসন আজ নেই বললেই চলে। প্রতিহিংসার বশর্বতী হয়ে ক্ষমতাসীন সরকার সকল বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে।””
সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য জীবনভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ বাংলাদেশের মানুষকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অন্যদে সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তোলার মতো শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন। বর্তমানে একাধিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালূ রয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যবস্থার লক্ষ্য ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্নতার সঙ্গে সমাজের বিরাজমান যে শ্রেনী ও অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে তা সম্পর্কিত। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারিম সমাজে যেখানে মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য নিজেই অর্থের সংস্থান করে, সমাজের সুবিধাভোগীরা সেখানে ভিন্ন ধরণের শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করে। বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হলে প্রচলিত সবধরণের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করতে হবে।”
‘‘ কারণ সকল শিক্ষার মধ্যেই ই্হলোকিক ও পরলৌকিক জীবন সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা আছে।”
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ জনসংখ্যাকে যদি জনসম্পদের পরিণত করতে হলে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ও সংগঠনের মাধ্যমে জনশক্তিতে পরিণত করলে এটা একটা পাওয়ার হবে, এটা একটা ইকনমিক প্রডাক্ট হিসেবে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। প্রেসিডেন্ট জিয়ার এই চিন্তাকে মাথায় রেখে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন শিক্ষাকে ঢেলে সাজিয়েছিলো। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।”
‘‘ জনইচ্ছার প্রতিফলে আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি শিক্ষাব্যবস্থাকে জনকল্যাণমুখী করবে। শুধুমাত্র ডিগ্রী প্রাপ্তির মোহ থেকে দেশের তরুনদেকে মুক্ত করতে হবে। সামর্থ, মেধা, ও চিন্তার জগদে পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের নিশ্চিত ব্যবস্থা আমরা করতে চাই। পেশাগত ও কারিগরি শিক্ষা, প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা, বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানের মৌলিক ও প্রায়োগিত গবেষনা, শত শত ধরণের ট্রেড ও পেশার জন্য প্রশিক্ষন কর্মসূচি মানবসম্পদকে বিকশিত করতে পারে।”
এই ব্যাপারে ‘ভিশন ২০৩০’ চিন্তা-ভাবনাও তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসললাম ও হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় সমাপনী অধিবেশনে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ শিক্ষা দর্শন বিষয়ক প্রবন্ধ পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে আফম ইউসুফ হায়দার, নুরুল আমিন, খলিলুর রহমান, লুৎফর রহমান খান, তাজমেরী এস এ ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, সুকোমল বড়ুয়া, আবদুল লতিফ মাসুম, এম এনামুল্লাহ(পারভেজ), ছিদ্দিকুর রহমান খান, মাহমুদুল হাসান, খসরুল আলম, নজরুল ইসলাম, নাজমুস সালাত, মামুন আহমেদ, এমতাজ হোসেন, মোরশেদ হাসান খান, মোহাম্মদ ইকবাল, সিরাজুল ইসলাম, শাহ শামীম আহমেদসহ ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনাসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকরা অংশ নেন।
এছাড়া বিএনপির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, আবদুল মান্নান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নুরী আরা সাফা, ফরিদা মনি শহীদুল্লাহ ও ২০ দলীয় জোটের আন্দালিব রহমান পার্থ, এটিএম ফজলে রাব্বী চৌধুরী, মোস্তফা জামাল হায়দার, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, রেদোয়ান আহমেদ, শফিউল আলম প্রধান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তফিজুর রহমান ইরান, আজহারুল ইসলাম, সাঈদ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, খোন্দকার লুৎফর রহমান, এম এম আমিনুর রহমান, সৈয়দ মাহবুব হোসেন, গোলাম মোস্তফা আখন্দ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
#khan