২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:০৩

রোহিঙ্গা মুসলিম গনহাত্যা বন্ধ করুন: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একসঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করতে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে আলোচিত এই সমস্যা সমাধানে ওআইসির কাছে কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কফি আনান কমিশনের পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করেছেন বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট আরও ভয়াবহ হওয়ার আগেই তা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ওআইসি এ ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব দিলে তা বাস্তবায়নে প্রস্তুত আছে বাংলাদেশ।’

নিউইর্য়কে জাতিসংঘ হেডকোয়ার্টার্সে মঙ্গলবার রোহিঙ্গা সংক্রান্ত ওআইসির কন্ট্যাক্ট গ্রুপের সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি এ আহ্বান জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাসচিব ড. ইউসেফ আল ওথাইমিন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুর সূত্রপাত মিয়ানমারে। তাই মিয়ানমার থেকেই এর সমাধান আসতে হবে। জাতিগোষ্ঠী নিশ্চিহ্নের আমরা অবসান চাই। রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের এই দুর্দশা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওআইসির কাছে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সব ধরনের নৃশংসতা বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপরাধ বেসামরিক লোক, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের রক্ষায় সেফ জোন (নিরাপদ এলাকা) প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক যেসব রোহিঙ্গাকে উদ্বাস্তু করা হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপদে ও সম্মান অক্ষুন্ন রেখে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। কফি আনান কমিশনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তা পুরোপুরি অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে এবং রোহিঙ্গারা নিরাপদে ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে মুসলিম দেশগুলোর মানবিক সাহায্য করতে হবে।

মিয়ানমারের মুসলিম ভাই-বোনদের জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা হচ্ছে এবং মিয়ানমার সরকারের অনুমোদনে দেশটির সেনাবাহিনীর চলমান অভিযান রাখাইন রাজ্যে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা স্থল ও নদীপথে বাংলাদেশে ঢুকেছে, যার ৬০ শতাংশই শিশু। এটি অসহনীয় মানবিক বিপর্যয়। আমি নিজে তাদের দেখতে গিয়েছি এবং তাদের, বিশেষ করে নারী ও শিশু, অবর্ণনীয় কষ্টের কথা শুনেছি।

কতটা নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে তা দেখা ও শোনার জন্য ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের বাংলাদেশ সফর করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত তিন দশক থেকে চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সস্প্রতি যারা এসেছে তাদের নিয়ে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান এখন বাংলাদেশে। স্থান ও সম্পদের স্বল্পতা সত্ত্বেও আমরা তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার দাবি করছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। কিন্তু ঐতিহাসিক দলিল বলছে, তারা যুগ যুগ ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মিয়ানমার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়ন করছে। প্রথমত, মিয়ানমার তাদের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকার না করে তালিকা থেকে বাদ দেয়। ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ভেতরেই আইডিপি ক্যাম্পে পাঠায়।’

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে প্রত্যাবাসনের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী ওআইসি নেতাদের জানান, রোহিঙ্গারা যাতে আবার মিয়ানমারে ফেরত যেতে না পারে সেজন্য দেশটি তাদের সীমানায় ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখছে, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭ ২:২৯ অপরাহ্ণ