২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:১২

ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে ঝুঁকিতে গ্রাহকের টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নতুন প্রজন্মের জীবন বীমা কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ বীমা পলিসি বিক্রি করে যে পরিমাণ অর্থ আয় করছে ব্যবস্থাপনা খাতে এর চেয়ে বেশি ব্যয় করছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো উদ্বৃত্ত অর্থ থাকছে না। যে কারণে ব্যবসা শুরুর তিন বছর পার হলেও লাইফ ফান্ড ঋণাত্মকই রয়ে গেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে বীমা পলিসি কেনা গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছর ২০১৬ সালে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ প্রিমিয়াম আয় করেছে ২০ কোটি সাত লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করেছে ২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি যা আয় করেছে তার থেকে এক কোটি ৭৮ লাখ টাকা বেশি খরচ করেছে। অন্যভাবে বলা যায়, কোম্পানিটি ১০০ টাকা আয় করতে ব্যয় করেছে ১০৯ টাকা।

বীমা আইন অনুযায়ী একটি জীবন বীমা কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম আয় থেকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কোনো অবস্থায় বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ জীবন বীমা ব্যবসার অনুমতি পাওয়ার পর একটি প্রতিষ্ঠান তিন বছর পর্যন্ত প্রথমবর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের সাড়ে ৯৭ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের সাড়ে ২২ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করতে পারে। ১৯৫৮ সালের বীমাবিধির ৩৯ ধারায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের এ নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সাল শেষে ট্রাস্ট লাইফের লাইফ ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক এক কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিল এক কোটি ২২ লাখ টাকা।

এদিকে, এ বীমা কোম্পানি প্রতি বছর নতুন বীমা পলিসি বিক্রি করে যে অর্থ আয় করছে, তার সিংহভাগই পরবর্তী বছরে আর নবায়নে আদায় হচ্ছে না। ২০১৪ সালে ট্রাস্ট লাইফ নতুন পলিসি বিক্রি করে প্রিমিয়াম আয় করে ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। পরের বছর নবায়নে যার মাত্র এক কোটি ২৬ লাখ টাকা আদায় হয়। একইভাবে ২০১৫ সালে নতুন বীমা পলিসি বিক্রি করে আয় হয় ১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর ২০১৬ সালে নবায়ন প্রিমিয়াম বাবদ আয় হয় মাত্র তিন কোটি দুই লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির বিক্রি করা বীমা পলিসির টাকার ৮০ শতাংশের ওপরে পরবর্তীতে আর নবায়নে আদায় হচ্ছে না।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে প্রতিষ্ঠানটির দাখিল করা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে নতুন বীমা পলিসি বিক্রি হয় ছয় হাজার ১১২টি। ২০১৫ সালে এ পলিসিগুলোর মধ্যে চার হাজার ৯৫৮টি পলিসিই তামাদি বা বন্ধ হয়ে যায়। আর ২০১৫ সালে আট হাজার ৬৬০টি পলিসি বিক্রির পর ২০১৬ সালে পলিসি তামাদি হয় ছয় হাজার ২৬টি। ২০১৬ সালে নতুন পলিসি বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার ৫২০টি। বর্তমানে কোম্পানিটিতে সচল পলিসি আছে নয় হাজার ৪৭০টি।

আইডিআরএ সূত্র জানায়, বীমা আইনের শর্ত না মেনেই নিবন্ধন সনদ পেতে আবেদন করে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ। এরপরও প্রতিষ্ঠানটিকে জীবন বীমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধন সনদ দেয় আইডিআরএ।

বীমা আইন অনুযায়ী, কোনো বীমা কোম্পানিতে একটি পরিবার থেকে দু’জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবে না। আর একটি পরিবার থেকে দু’জন পরিচালক থাকলে তাদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।

আইনে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও একই পরিবার থেকে চারজন পরিচালক রেখে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করা হয়। তারা হলেন- পদ্মা ইসলামী লাইফের পরিচালক জয়নাল আবেদিন ফাজরের দুই ভাই জাকের আহমেদ ভূইয়া ও মোহাম্মদ রাকিব আহমেদ এবং জয়নাল আবেদিন জাফরের স্ত্রী শওকত আরা বেগম ও তার ছেলে রাসেদ আবেদিন। আর তাদের কাছেই রাখা হয় প্রতিষ্ঠানটির ২১ শতাংশ শেয়ার।

বীমা আইনে একই পরিবারের সঙ্গায় বলা হয়েছে, বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে এবং ভাই ও বোনের ছেলে-মেয়ে, তাদের স্ত্রী অথবা স্বামী সবাই একই পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

যোগাযোগ করা হলে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহফুজুল বারী চৌধুরী বলেন, প্রথমদিকে ব্যয় একটু বেশিই হয়। কারণ প্রথমদিকে ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচার (মূলধনী ব্যয়) থাকে। তবে ব্যয়ের পরিমাণ এখন অনেক কমে আসছে।

পরিশোধিত মূলধন ভাঙার বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচারের জন্য পরিশোধিত মূলধনের টাকা উত্তোলন করতেই হয়। তৃতীয় প্রজন্মের কোম্পানিগুলোও পরিশোধিত মূলধনের টাকা উত্তোলন করে খরচ করেছিল।

একই পরিবার থেকে দুই এর অধিক পরিচালক থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, জাকের আহমেদ ভূইয়া ও মোহাম্মদ রাকিব আহমেদ এখন ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক হিসেবে নেই। এখন পরিচালক আছেন জয়নাল আবেদিন জাফর ও তার স্ত্রী।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭ ১২:৫২ অপরাহ্ণ