২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:৫৯

বাংলাদেশে পালানো মুসিলমদের সঙ্গে কথা বলতে চান সুচি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মুসলিমরা কেন রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসছে সেটি খুঁজে বের করার জন্য মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও নেত্রী অং সান সুচি- তাদের সাথে কথা বলতে চান।

গত ২৫ আগস্ট নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর জাতির উদ্দেশ্যে এটাই ছিল সুচি’র প্রথম ভাষণ।

সুচি তার ভাষণে সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছেন।

সুচি’র এ ভাষণ নিয়ে বিশ্ব নেতাদের মাঝে প্রবল আগ্রহ ছিল।

মিয়ানমারের নেত্রী বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণে ভীত নন। রাখাইন অঞ্চলে সংঘাতের নিরসনের জন্য একটি টেকসই সমাধানের ওপর জোর দেন সুচি।

মঙ্গলবার দেশটির টেলিভিশনে সরাসরি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে সুচি আরও বলেন, “বেশ কিছু মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে- এ ধরনের খবর শুনে আমরা উদ্বিগ্ন।”

কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ হবে সুচি’র জন্য শেষ সুযোগ।

কিন্তু এ ‘শেষ সুযোগ’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে সেটি ব্যাখ্যা করেননি জাতিসংঘের মহাসচিব।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর অস্ত্র বিক্রিসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে অবরোধ আরোপের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে মিজ সুচি’র এ ভাষণে নতুন কিছু আসে কি না সেদিকে অনেকের নজর ছিল।

তবে ভাষণে সুচি বিশ্ব মোড়লদের সাফ জানিয়ে দিলেন, আন্তর্জাতিক মহলের সতর্কবর্তায় মোটেই ভীত নন তিনি ও মিয়ামনার সরকার। যা বিশ্ববাসীকে বেশ হতাশ করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এর আগে বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকদিন আগে বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চাবিকাঠি অং সান সুচি’র হাতেই রয়েছে। সেজন্য সুচি-কে তার পুরনো ভূমিকায় ফিরে যেতে হবে।

ড. ইউনূস বলেছিলেন, সুচি তার পুরনো ভূমিকায় ফিরে যাবেন, নাকি বর্তমানে যে ভূমিকা পালন করছেন সেটি চালিয়ে যাবেন, সে সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হবে।

গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে পালিয়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

এই ভাষণের মাধ্যমে চলমান সংকটের সমাধান আনার জন্যে চাপ সুচি’র ওপর চাপ তৈরি হয়েছিল বিশ্বজুড়ে।

এদিকে, সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে অং সান সুচিকে নিজের নেতৃত্ব প্রমাণের আহ্বান জানিয়েছিল ফ্রান্স ও ব্রিটেন।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যেভাবে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সেটিকে ‘জাতিগত নির্মূলের’ সাথে তুলনা করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘে চলমান সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেননি সুচি।

তিনি বলেছিলেন, অধিবেশনে যোগ না দিয়ে মিয়ানমারে ভাষণ দেবেন।

কয়েকদিন আগে মিয়ানমারের প্রধানসেনা কর্মকর্তা জেনারেল মিন অং হাইং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার জন্য মিয়ানমারের ভেতরে সবাইকে আহবান জানিয়েছেন।

সেনাবাহিনী মনে করে, রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গারা একটি শক্ত ঘাটি গড়ে তুলতে চাইছে।

যদিও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয় না। সেনাবাহিনী এবং সরকার রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ মনে করে।

সেনাপ্রধান এ কথাও বলেছিলেন যে, রোহিঙ্গারা কখনোই মিয়ানমারের জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

এর পর সুচির বক্তব্যেই ছিল বিশ্ববাসীর দৃষ্টি। কিন্তু সুচিও মানবতার পক্ষে অবস্থানকারী বিশ্ববাসীকে হতাশ করলেন। প্রকারন্তরে তিনি দেশটির সেনাবাহিনীকেই সমর্থন জানালেন তার ভাষণে।

এবার দেখার বিষয়, মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেক কী পদক্ষেপ নেয়!

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ