উখিয়া প্রতনিধিি (কক্সবাজার) :
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কুতুপালং ঢালায় ট্রাক ভর্তি ত্রাণ নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা শিবিরের সামনে থামলো চট্টগ্রামের একটি দল। গতকাল শনিবার বিকালে এ দল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণ করতে এসেছে। দলটির ত্রাণের ট্রাক থামতেই মূহুর্তের মধ্যে হুড়ুহুড়ি করে শত শত ক্ষুধার্ত নতুন আসা রোহিঙ্গারা ছুটে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাদের চিৎকার-চেঁচামেচি। এদের প্রায় সবারই একটাই দাবী , ‘কাপড় চাই না; খাবার চাই, এক প্যাকেট খাবার।’
উখিয়া-টেকনাফ সড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় রাস্তার ধারে এ রকম হাজার হাজার রোহিঙ্গারা খাবারের আশায় অপেক্ষা করছে। জামা কাপড় কিংবা অন্য কোনও ত্রাণ সামগ্রী নয়; তাদের চাই, এক প্যাকেট খাবার। সেই সঙ্গে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের আশ্বাস পেলেই হাতে আসমান পাওয়ার আনন্দ ফুটে উঠে তাদের চোখে-মুখে।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সামনে ত্রাণ নিতে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী কামাল বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে বাংলাদেশে অনেক কষ্ট করে আসি। এপাড়ে আসার পর থেকে এদেশের মানুষ আমাদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করছেন। কেউ খাবার দিচ্ছেন, কেউ পানি দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ চাল, ডাল, তেল দিচ্ছেন। পরনের কাপড়ও দিচ্ছেন কেউ কেউ।’
মংডুর উদং এলাকার বাসিন্দা এই রোহিঙ্গা আরও বলেন, ‘এসব ত্রাণ সামগ্রী আমাদের দরকার। তবে এই মূহুর্তে আমাদের বেশি দরকার, মাথা গোঁজার ঠাঁই। তাঁবু খাটানোর জন্য ত্রিপল, কাঠ, বাঁশ -এসবও দরকার। তার আগে বেঁচে থাকার জন্য চাই এক মুঠো খাবার।’
একই কথা জানালেন কুতুপালং ক্যাম্পের সামনে বসে থাকা ষাটোর্ধ্ব রোহিঙ্গা নারী সকিনা খাতুন। মিয়ানমারের বুচিদং এলাকার বাসিন্দা এই নারী বলেন বাংলাদেশে এসেছি। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত রাস্তার পাশে কাটিয়ে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত তাবু খাটানোর সামান্য জায়গাটুকুও পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাতে টাকাও নেই যে, বাঁশ ও ত্রিপল কিনে তাবু খাটাবো। অনেকে ত্রাণ দিচ্ছেন। এর মধ্যে মিলছে খাবার ও কাপড়।’তিনি বলেন, ‘আমাদের কাপড় লাগবে না। এই মূহুর্তে আমরা বেঁচে থাকার জন্য খাবার ও থাকার জন্য আশ্রয় চাই।’শুধু হালিমা নয়, তার মতো আরও অনেক শরণার্থী একই চাহিদার কথা বলেছেন।
শনিবার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে বালুখালী ক্যাম্প পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে ত্রাণ হিসেবে দেওয়া কাপড়ের অসংখ্য ছোট ছোট স্তুপ পড়ে আছে। শরণার্থীরা ওইসব কাপড় ধরেও দেখছেন না। ত্রাণ হিসেবে দেওয়া এসব কাপড় তাদের কাজে না আসায় প্রথমে গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে এগুলো সড়কের পাশে ফেলে দেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। কাপড় ফেলে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক রোহিঙ্গা জানান, ত্রাণ হিসেবে এসব কাপড় তাদের কাজে আসছে না। তারা কাপড়ের চেয়ে খাবারের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রাণবাহী গাড়িতে খাবার দেখলে রোহিঙ্গারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। হুড়োহুড়ি করে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। শনিবার দুপুরে চন্দনাইশ থেকে খিচুড়ি নিয়ে আসা একটি ত্রাণবাহী গাড়ি থেকে খাবার গ্রহণ করতে গিয়ে ১০ বছর বয়সী রহিমা নামের এক শিশু দুর্ঘটনার শিকার হয়।
টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকা হোয়াইকংয়ের বাসিন্দা রহিম উল্লাহ বলেন, ‘অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে খিচুড়িসহ অন্য খাবার রান্না করে নিয়ে আসছেন। এগুলো রান্না ও প্যাকেট করে আনতে গিয়ে তাদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আবার এসব খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। তার পরামর্শ, রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার না দিয়ে চাল, ডাল, তেল ও নগদ টাকা দেওয়া গেলে ত্রাণদাতাদের কষ্ট কম হতো।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ