নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারত সরকার বাংলাদেশে চাল (নন বাসমতি) রফতানি না করার জন্য নানা ফন্দি ফিকির আটছে। এর আগে চালের মৃল্য বৃদ্ধি করলেও এবার চাল রফতানি আড়াই মাসের জন্য রফতানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কোন কারণ উল্লেখ না করলেও ভারত সরকার সে দেশে খাদ্য সংকট যাতে দেখা না দেয় এবং চালের মূল্য বৃদ্ধি না পায় সে জন্য চাল রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করেন সে দেশের ব্যবসায়ীরা। তবে নন বাসমতি চাল রফতানি বন্ধ করলেও বাসমতি চালের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।
ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশ বাজারে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য অন্য কোন দেশ থেকে চাল আমদানি করা যায় কি না তার জন্য সরকারকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
এদিকে চাল রফতানি বন্ধ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে উভয় দেশের আমদানি-রফতানিকারকরা। বাংলাদেশের অনেক চাল আমদানিকারকদের শত শত টন এলসি পড়ে আছে ভারতীয় রফতানিকারকদের কাছে।
ওপারের রফতানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কোন চাল ভারত থেকে বাংলাদেশে রফতানি হবে না এ সংক্রান্ত নয়া দিল্লীর একটি চিঠি ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমসে এসে পৌঁছেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ফরেন ট্রেড (Development & Regulation Act 1992 No.22 of 1992) ফরেন ট্রেড পলিসি ২০১৪-২০১৯ অনুযায়ী ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড অলোক চাটুরভেদী স্বাক্ষরিত নোটিফিকেশন নং- ৭১ (আরই-২০১৭)/২০১৪-২০১৯ এ আদেশ জারি করা হয় ১২ সেপ্টেম্বর। এই আদেশ আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে প্রজ্ঞাপণে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যাদের এলসি এই তারিখের আগে করা আছে তাদের ক্ষেত্রে কি হবে সেটা উল্লেখ করা হয়নি এ আদেশে।
বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, ভারত থেকে যে হারে চাল বাংলাদেশে রফতানি হচ্ছে তাতে আমাদের দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এজন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাউল রফতানি বন্ধ করতে একটি চিঠি পেট্রাপোল কাস্টমসে পাঠিয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত থেকে নন বাসমতি চাল রফতানি হবে না।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টম কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম মাওলা জানান, ভারত থেকে প্রতিদিন প্রচুর চাল আমদানি হচ্ছে। আজও আমদানি হয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার চাল রফতানি বন্ধ করেছে এ সংক্রান্ত কোন চিঠি আমরা পাইনি।
বেনাপোলের চাল আমদানিকারক হাজী মুছা করিম এন্ড সন্সের মালিক আব্দুস সামাদ বলেন, ভারত সরকার খুব তাড়াতাড়ি চাল রফতানি বন্ধ করবে এ সংক্রান্ত কথা বিভিন্ন লোক মুখে শুনছি। ভারত থেকে এখনও কোন রফতানিকারক তাদের বিষয়টি জানায়নি। চাল আমদানি বন্ধ হলে ব্যবসায়ীরা খুব অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়বেন।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ভারত সরকার প্রায়ই রফতানির ক্ষেত্রে এ রকম আচরণ করে থাকেন। এর আগেও চাল, পেঁয়াজ, পাট নিয়ে একই কান্ড ঘটিয়েছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকারের উচিত অন্যান্য দেশ থেকেও চাল আমদানি করা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) রেজাউল করিম জানান, ভারত থেকে প্রচুর চাল আসছে কিন্তু বন্ধের কোন খবর আমরা পাইনি। খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে প্রায় ২০০ ট্রাক চাল দাঁড়িয়ে আছে। গত ১ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টম্বর পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৫৯ হাজার ৯‘শ ৯৯ মেট্রিক টন চাল বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন জানান, আগ্রাধীকার ভিত্তিতে আমদানিকৃত চাল দ্রুত খালাস দেয়া হচ্ছে। ভারত থেকে চাল রফতানি বন্ধের কোন নির্দেশনা আমরা হাতে পাইনি। ফলে এ ব্যাপারে আমাদের বলারও কিছু নেই।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ