নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ইঞ্জিনচালিত সিএনজিতেই একের পর এক ছিনতাই ও খুনের ঘটনা ঘটছে। এ রোডে সিএনজির সংখ্যাও জানা নেই পুলিশের। তবে এ সড়কের প্রতিটি এলাকায় রয়েছে একটি করে অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ডে যারা চাঁদাবাজি করে তারাই জানে এ সড়কে ক’টি সিএনজি চলাচল করে। আর এসব অবৈধ স্ট্যান্ডে বসেই ছিনতাই ও হত্যার পরিকল্পনা করে থাকে সিএনজি চালকরা।
এ নিয়ে প্রশাসন তৎপরতা না থাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডটি ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আর একের পর এক পথচারী প্রাণ হারাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত লিংক রোডের দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ফতুল্লার শিবু মার্কেট থেকে সাইনবোর্ডের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। এই সড়কেই সবচেয়ে বেশি সিএনজি ও যাত্রীবাহী বাসে অপরাধের ঘটনা ঘটছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে সরকারি তোলারাম কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার মাহমুদ শুভ্র (২১) ফতুল্লার লালপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। ৯ সেপ্টেম্বর সকালে ফতুল্লার ভুইগড় এলাকার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশের ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের পরিবার হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ তাৎক্ষণিক জানাতে না পারলেও পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, সিএনজিতে ছিনতাইকারীরা তাকে হত্যা করেছে।
এর আগে ২২ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ভুইগড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিঙ্গার প্লাসের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার নুর আহম্মেদ সোহেল তার শোরুমে প্রবেশ করার সময় মুখোশধারী দুই ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলে এসে তাকে গুলি করে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ফতুল্লার ভুইগড়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে রূপায়ন টাওয়ারের সামনে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে রাজু মিয়া (৪৫) নামের এক ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়। ওই সময় আহত হয় কবির নামের অপর এক যুবক। তাছাড়া চলন্ত সিএনজিতে প্রায় সময়ই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ সব ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেন, আবার অনেকেই ঝামেলা ভেবে এড়িয়ে যান।
জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড, দেলপাড়া, ভুইগড়, জালকুড়ি, খান সাহেব স্টেডিয়ামের সামনে, শিবুমার্কেট ও চাষাঢ়া এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে মাসোহারা আদায় করে থাকে। আর উল্লিখিত এলাকাগুলোতে অবৈধভাবে স্ট্যান্ড তৈরি করে সেখানে বসেই লিংক রোডে অপরাধের ছক আঁকে ছিনতাইকারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএনজি চালকরা জানান, সড়কে গাড়ি চলুক আর নাই চলুক, মাসোহারা ভোরে এসেই দিতে হয়। এরপর সড়কে যাতায়াত করতে হয়। গাড়ির জমা আর গ্যাসের টাকা উঠাতে কেউ ব্যস্ত হয়ে উঠে, আবার কেউ স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে পরামর্শ করে। লিংক রোডের প্রতিটি সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকলে অপরাধ অনেকটা কমে যাবে বলে মনে করেন তারা। এই সড়কে যাতায়াতকারীদের অভিযোগ, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আওতাধীন এই সড়কে পুলিশের টহল অপ্রতুল।
রাতে ঘরমুখো যাত্রীরা অভিযোগ করেন, লিংক রোডের ৩টি স্পটে পুলিশের চেক পোস্ট থাকলেও তারা ব্যস্ত থাকেন যাত্রী হয়রানিতে। বিশেষ করে, প্রাইভেটকারে মহিলা যাত্রী থাকলে হয়রানির শিকার একটু বেশি হতে হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন জানান, ছিনতাইকারীরা লিংক রোডের নিরব স্থানগুলোতে সময় বুঝে অপরাধ করে থাকে। আমরা পর্যাপ্ত টহলের ব্যবস্থা করেছি। পুলিশ চেক পোস্টে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অন্যায় কাজের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যানবাহনে আমাদের পুলিশ চাঁদাবাজি করে না। তবে চাঁদাবাজির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি লিংক রোড থেকে উদ্ধার করা কলেজ ছাত্র শুভ্রর মৃত্যুর কারণ জানতে পেরেছি। তাকে ছিনতাইকারীরা হত্যা করেছে। এ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

