ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মিনগ্রামে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে গ্রামবাসীর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার ঘটনায় গ্রামের পুরুষরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, মেয়েরা আছেন আতঙ্কে। মিনগ্রামের বিশ্বাস বাড়ির লোকজনের পুলিশের আটক এবং প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে দিন কাটছে।
জানা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মিনগ্রামে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে গ্রামবাসীর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষের অনন্ত ১০ জন আহত হন। প্রায় ২৫টি বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয়রা জানান, ৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত এই হামলার সময় প্রতিপক্ষদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সুজন বিশ্বাস (৪০) ও মুন্না মোল্লা গুরুতর আহত হন।এছাড়া আরো ৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ওই দু’জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে প্রতিপক্ষরা দাবি করেন, ঘটনার দিন তাদের সমর্থকদের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। আহত হয়েছে মিঠু বিশ্বাস (৪২) নামের একজন। তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মিনগ্রামের পুরুষরা কেউ নেই। নারীরা জানান, প্রতিপক্ষরা হামলা করতে পারে এমন ভয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন। তাছাড়া পুলিশও তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরুষদের খোঁজ করছেন। মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হুসাইন জানান, তাদের গ্রামে দুইটি দল রয়েছে। যার একটির নেতৃত্ব দেন সাবেক মেম্বর চেরাগ আলী বিশ্বাস, অপরটির ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম শেখ। সম্প্রতি কোন দলের প্রভাব কতটা তা দেখানো নিয়ে চলে বিরোধ। মাঝে মধ্যেই ছোট ছোট ঘটনা ঘটতে থাকে। গত ৮ সেপ্টেম্বর ঘটে বড় ঘটনা।
বিকেল ৫টার দিকে আবুল কালাম শেখের লোকজন চেরাগ আলী বিশ্বাসদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এই হামলায় গ্রামের টুটুল বিশ্বাস, আক্কাস আলী, আজিবর রহমান মোল্লা, বকুল বিশ্বাস, রওশন আলী, ইকবাল আলী, রাশেদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মফিজ উদ্দিন বিশ্বাস ও মনজের আলী বিশ্বাসসহ প্রতিপক্ষরা ১৮ জনের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এ সময় চেরাগ আলীর সমর্থকদের হামলায় মহন খন্দকার, মান্না খন্দকারসহ ৪ জনের বাড়িও ভাঙচুর হয়। আবুল কালাম শেখের সমর্থক মিন্টু বিশ্বাস আহত হন।
লিয়াকত হুসাইন জানান, ঘটনার পর থেকে বিশ্বাস পরিবারের পুরুষরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন। এই গ্রামে বিশ্বাসদের কমপক্ষে ১২০টি পরিবার রয়েছে। যাদের ২ শতাধিক পুরুষ বাড়িছাড়া রয়েছেন। প্রতিপক্ষরা হামলা করতে পারে আবার পুলিশ কখন কাকে গ্রেফতার করে এই আশঙ্কায় তারা বাড়ি থাকতে পারছেন না। আর রাতে পুলিশ আসলে মেয়েরা ভয় পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আবুল কালাম জানান, গ্রামের স্কুলের কমিটি নিয়ে প্রথম ঘটনা শুরু হয়। এরপর চেরাগ আলীর লোকজন বলার চেষ্টা করে তাদের দলে বিএনপি রয়েছে। এই বলে নানা সময় খারাপ কথা বলে। প্রথমে চেরাগ আলীর লোকই তাদের বাড়িঘরে হামলা করে। পরে বিশ্বাস পাড়ার লোকজনই বিশ্বাসের কিছু বাড়িতে ভাঙচুর করেছে বলে তিনি শুনেছেন। বিষয়গুলো মিটিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।
আর প্রতিপক্ষ দলের নেতা চেরাগ আলী জানান, প্রতিপক্ষ আবুল কালাম নিজেদ দল বৃদ্ধি করতে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জোট বেঁধেছে। এখন তাদের নিয়ে প্রকৃত আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর আক্রমণ করছে। তাদের ভয়ে এখন ঘরে ঘুমাতে পারছেন না। এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, দুইপক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ৮ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে ৮টি সড়কি ও ১০টি ঢাল উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে পুলিশের তৎপরতায় গ্রামটি শান্ত রয়েছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি