২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:২৯

সু চি’র রোহিঙ্গাদের জুতা মেরে গরু দান

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় পৌনে ৩ লাখ সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য ছেড়েছে। প্রাণ বাঁচাতে এসব রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর রাখাইনে ১ হাজারের উপরে রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। নিকৃষ্ট এ হত্যাযজ্ঞে আন্তর্জাতিক মহল চাপ দিলেও দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি’র টনক নড়েনি। উল্টো তিনি ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সংকটের জন্য রোহিঙ্গাদের দুষেছেন। অবশেষে সু চি’র সরকার বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক হতে চলেছে। অনেকটা বাংলা প্রবাদের ‘জুতা মেরে গরু দানের’ মতো ত্রাণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে শনিবার এই ত্রাণ সহায়তার খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাখাইন ছেড়ে যারা শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে, তাদের ত্রাণ সহায়তা দেবে মিয়ানমার সরকার। খবর: এএফপি’র।

গত ২৪ আগস্ট থেকে চলা সংঘাতের ১৬তম দিনে এসে প্রথমারের মতো মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রিলিফ সহায়তার প্রস্তাব করল। সেনাবাহিনীর অভিযানে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা যেসব ক্যাম্পে ও খোলা জায়গায় অবস্থান নিয়েছে, সেখানে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, বৌদ্ধদের নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে তাদের গ্রামগুলোতে হামলা চালায়। এ সময় তাদের প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তারা রাখাইন থেকে অনেকটা খালি হাতে পালিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসে। কিন্তু শরণার্থী ক্যাম্পে এসে তারা খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে ভুগছেন। বাংলাদেশ এসব রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে অনুরোধ করেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে তাদের জন্য একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ বা সেফ জোন করার প্রস্তাব করেছে। এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন করে সংঘাতে শুধু মুসলিম রোহিঙ্গা নয়, বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ২৭ হাজার মানুষ রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করলেও আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থাগুলো তাদের সেখানেই ফেরানোর পক্ষে তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রায় দুই সপ্তাহের সংঘাতের পর মিয়ানমার সরকার সম্প্রতি জানিয়েছে, মংডুর উত্তর, দক্ষিণ ও কেন্দ্রস্থলে তারা তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। মূলত এই এলাকাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক রোহিঙ্গাদের বসবাস এবং সেখানেই তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট’ শনিবার রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তার খবর সহ সু চি’র সরকারের দাবি তুলে ধরেছে। যাতে বলা হয়েছে, বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের তারা পেয়েছেন, ক্যাম্পে রেখে রেড ক্রসকর্মীদের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তবে এই সংবাদমাধ্যমটি সংঘাতের পরও যেসব রোহিঙ্গা রাখাইনে আছেন, তাদের কোনো বক্তব্য নিতে পারেননি। ফলে সত্যিই যে তারা সু চি’র সরকারের সহায়তা পাচ্ছেন, তা কোনো নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করতে পারেনি এএফপি।

প্রসঙ্গগত, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সরকার ‘বাঙালি’ বলে থাকে। তাদের দাবি, রাখাইনের এই বিশাল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে তাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর ফলে প্রায়ই সরকার ছাড়াও স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর নানা বৈষম্যের শিকার হন সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা। সংঘাতের জের ধরে গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সবমিলে এই সংখ্যা এখন ৫ লাখের উপরে দাঁড়িয়েছে।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টার ইয়াং লি শুক্রবার এএফপিকে বলেছেন, ‘রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে কমপক্ষে ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা মুসলিম।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের তারকা রাজনীতিক, জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে ভয়ডরহীন গণতন্ত্রের ক্যাম্পেনার নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার নৈতিক সক্ষমতা ব্যবহারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’ ইয়াং লি বলেন, ‘আমি মনে করি, জান্তার অধীনে সু চি’র বন্দিদশার সব স্মৃতি আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘সু চি এখন পুরো দস্তুর রাজনীতিক। অধিকার আদায়ের নেত্রী নন।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরেক নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানের শিক্ষা আন্দোলনের নেত্রী মালালা ইউসুফজাই এবং ডেসমন্ড টুটুও অং সান সু চি’র অবস্থানের কড়া সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছেন।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ