আশিকুর রহমান,বাঞ্ছারামপুর (প্রতিনিধি):
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের পূর্বেই ব্যবহারের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন বরাবর এক চিঠিতে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ.বি.এম. মশিউল আলম।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্য থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য গত বছরের ২৪ আগস্ট হস্তান্তর করেন ঠিকাদার। সে সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান প্রশাসনের পক্ষে বুঝে নেন। গত এপ্রিল মাসে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সম্প্রসারিত ভবনটির নির্মাণকাজ অতি নিন্মমানের হয়েছে বলে পরিলক্ষিত হয়। যাহা বর্তমানে অরক্ষিত ও ব্যবহার অনুপোযোগি অবস্থায় রয়েছে। তবে ভবনটি দীর্ঘ দিন অরক্ষিত থাকায় ভবনের ভেতরে থাকা পানির কল, বেসিনের কল, পানি তোলার মটর ইত্যাদি চুরির ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে তৎকালীন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাঞ্ছারামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন।
সরেজমিনের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, সম্প্রসারিত তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার এনসথেসিয়া কক্ষের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে। প্রতিটি কক্ষের দেয়াল থেকে প্ললাষ্টার ঝড়ে পড়ছে। তৃতীয় তলার রোগীর বেডের কক্ষের দেয়ালের প্লাষ্টারে় শেওলা ধরে কালো হয়ে গেছে। তৃতীয় তলার প্রতিটি কক্ষের ছাদে শেওলা পড়ে রঙ উঠে কালো হয়ে গেছে। নিচতলার প্রায় প্রতিটি কক্ষের দেয়াল থেকে প্লাষ্টার খসে পড়ছে। বাহিরের দেয়াল থেকেও প্লাষ্টার উঠছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ ২০০৭ সালে তিনতলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে। ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও নয় বছরে কাজ সম্পন্ন করে ঠিকাদার। কাজটি বাস্তবায়ন করে মেসার্স লতিফ বিল্ডার্স ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ.বি.এম মশিউর রহমান বলেন, ৫০ শয্যার উন্নীতকরণের নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, রঙ উঠে যাচ্ছে। দেয়ালের পলেস্তরা উঠে যাচ্ছে, শেওলা পড়ছে। সেখানে চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী এবং রোগী থাকবে আর আমাদের ভয় হচ্ছে কোনোনা কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। ভবনের নাজুক অবস্থার কথা সিভিল সার্জন স্যারকে জানানো হয়েছে। কোনো সংস্কার করা ছাড়া ভবনে যাওয়া সম্ভব হবেনা। দেয়ালে পেরেক ঠুকতে গেলে প্লাষ্টার উঠে যায়, সেজন্য দেয়ালে কোনো কাজও করা যায়না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্প্রসারিত নতুন তিন তলা ভবনের বেশ কিছু জায়গায় আমরা দেখেছি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদারের নিম্ন মানের কাজের কারণে এসব সমস্যা হচ্ছে। এগুলো আমরা উপজেলা পরিষদ অথবা এডিবি থেকে মেরামত করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর উপসহকারি প্রকৌশলী মো. ফিরোজ উদ্দিন বলেন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের কয়েকটি কক্ষের দেয়াল থেকে প্লাষ্টার উঠে যাচ্ছে আর কয়েকটি কক্ষের ছাদ চুইয়ে পানি পড়তে দেখা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন নিশিত নন্দী মজুমদার বলেন, আমি নিজেও দেখেছি বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজের কিছু সমস্যার কারণে কিছু সমস্যা হয়েছে। এগুলো দ্রুত সারিয়ে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে নতুন ভবন উদ্বোধন করার চেষ্ঠা চালানো হচ্ছে
দৈনিক দেশজনতা /এন আর