২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:০৭

সিদ্দিকুরের চোখের ‘বিনিময়ে’ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসবে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘দেশের ইতিহাসে রক্ত ছাড়া কোনো ভালো কাজের সূচনা হয়নি। ইতিহাসের এক অধ্যায়ে নিজের নাম লেখাতে পেরে ধন্য মনে করছি।’ হাসি মুখে কথাগুলো বলছিলেন পুলিশের টিয়ার শেলে চোখ হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক।

চলতি বছরের ২০ জুলাই রাজধানীর শাহাবাগে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি পরীক্ষার হলে বসার। সেই দাবি আদায়ের আন্দোলনে পুলিশের অমানবিক হামলায় দুই চোখ হাড়ান সিদ্দিক। তবুও কোনো আক্ষেপ নেই। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই দুই চোখের আলো হারানো এ শিক্ষার্থীর।

শাহাবাগের আন্দোলনে সিদ্দিকের চোখ নষ্ট হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যুক্ত হওয়া সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে বসতে চলছে। মাস্টার্স পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হবে সিদ্দিকের চোখ হারানোর সফলতা।

২ লাখ ৫৫ হাজার শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে চোখের আলো বিসর্জন দিয়েছেন সিদ্দিক। তার চোখের বিনিময়ে রোববার প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে বসবেন।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় পরে পরীক্ষার হলে বসবে এ বিষয়ে পরিবর্তন ডটকমকে সিদ্দিক বলেন, ‘আমার খুব আনন্দ লাগছে। আমার চোখের আলোয় সবাই যেন আলোকিত হয় এটাই আমার প্রত্যাশা।’

‘আমি যখন এয়ারপোর্টে নেমে শুনলান পরীক্ষার রুটিন দেয়নি। তখন অনেক খারাপ লাগছিল। এরপর যখন পরীক্ষার রুটিন দেয়। তখন খুব আনন্দ লাগছিল। আমার প্রত্যাশা বড় ভাইরা ভালো ভাবে পরীক্ষা দেবেন। তারা দেশের কল্যাণে নিজেদের কাজে লাগাবেন’ যোগ করেন সিদ্দিক।

নিয়মানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম পরিচালিত হোক এমন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘আমি চাই না আর কাউকে ন্যায্য বিষয় নিয়ে আন্দোলন করে আমার মতো অন্ধ হোক।’

সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলার সময় বার বার তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি, খুবই খুশি। দীর্ঘদিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে বসতে পারছিল না। তারা চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছিল না। প্রতিটা শিক্ষার্থী পরিবারের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা হয়ে ছিলো পরীক্ষা। আর সেই পরীক্ষার সিদ্ধান্ত আমার চোখে হাড়ানোর পরে এসেছে। আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। শিক্ষার্থীদের চোখের আলোয় আমি আলোকিত হবো।

সাত সরকারি কলেজের পরীক্ষার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক ড. নূর-ই ইসলাম বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়ক হয়েছিলো। আন্দোলনের আগেই পরীক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু ওই সাত কজের শিক্ষাকরা পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবগত না করায় আন্দোলনের সৃষ্টি হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল রোববার প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত সাত সরকারি কলেজের মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী।

এদিকে সাত সরকারি কলেজের পরীক্ষার দাবিতে প্রথমদিকে রাস্তায় নেমে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফরিদ জানান, অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখ অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবার ঘোষণা এসেছে। তবে এখনো পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হয়নি।

তিনি জানান, ঢাকার সাত সরকারি কলেজ বাদে অন্য সব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তাদের এক ব্যাচ সিনিয়র হয়ে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। ২০ জুলাই শাহবাগে আন্দোলনের সময় পুলিশের টিয়ার শেলে সিদ্দিকুর রহমান চোখে আঘাত পান। প্রথমে সিদ্দিকুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ২৭ জুলাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসাতেও সিদ্দিকুরের চোখের কোনো উন্নতি হয়নি। তবে কষ্টের মাঝেও আনন্দের খবর হলো ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল) চাকরি পাচ্ছেন সিদ্দিকুর রহমান। ১৪ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৭ ৪:২৪ অপরাহ্ণ