নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিয়ানমারে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশে আসা আড়াই লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালিতে বনবিভাগের প্রায় দেড় হাজার একর জায়গা সাহায্য সংস্থাগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে অস্থায়ী ভিত্তিতে এ আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও এর পরিচালনার ধরন কী হবে অথবা সেখানে দাতা সংস্থাগুলোর ভূমিকা কি থাকবে- সেই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এর আগে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বালুখালিতে ৫০ একর জায়গা বরাদ্দ দিতে বনবিভাগকে চিঠি দিয়েছিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এরপর সেখানে থাকা প্রায় দেড় হাজার একর জায়গার পুরাটাই রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ।
এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে দাতা সংস্থা ও সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছে। তবে ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, এক জায়গায় এত লোকের পুনর্বাসন করতে গেলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে নতুন ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘নতুন ক্যাম্পের জন্য জায়গা নির্ধারণ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে ক্যাম্প নির্মাণের ব্যয়, পরিচালনা পদ্ধতিসহ অন্য বিষয় নিয়ে দাতা সংস্থা ও সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে গত ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ ও এর আগে গত অক্টোবরের পর প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এসব রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নভাবে ২০টির বেশি স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পাসপোর্ট অধিদফতরের মাধ্যমে ১৭টি স্থানে বায়োমেট্রিক্স নিবন্ধন সম্পন্ন করে নতুন এ ক্যাম্পে নিয়ে আসা হবে। পাসপোর্ট অধিদফতর দু’একদিনের মধ্যেই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করবে বলেও জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
শুধু নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়া রোহিঙ্গাদেরকেই নতুন ক্যাম্পে নিয়ে আসা হবে জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘দ্রুততম সময়ে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করতে পাসপোর্ট অধিদফতরকে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক দেবে জেলা প্রশাসন। এরপর নতুন ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে রোহিঙ্গাদের সুশৃঙ্খলভাবে জীবন যাপনের ব্যবস্থায় নিয়ে আসা হবে।’
এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী কমিশন ইউএনএইচসিআরের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মুখপাত্র ভিভিয়ান তান বলেছেন, ‘এত লোককে এক জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। কারণ, একটি সীমাবদ্ধ এলাকায় এত বিপুল লোককে নিয়ে আসলে সেখানে খাবার পানিসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান দেওয়া কঠিন হবে।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত অতিক্রম করে আসা রোহিঙ্গাদের সবাইকে শরণার্থী মনে করে জাতিসংঘ। নিবন্ধনের প্রক্রিয়া যেমনই হোক না কেন, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রচেষ্টা সব সময় অব্যাহত থাকবে।’
রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করার বিষয়ে ভিভিয়ান তান বলেন, ‘নতুন আসা রোহিঙ্গাদের খাদ্য, পানি ও ওষুধের মতো জরুরি সামগ্রী সরবরাহ করা উচিত। কিন্তু যেভাবে এলোমেলো অবস্থায় তারা আসছে, এতে তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছানোও যথেষ্ট কাষ্টসাধ্য।’
তবে দুটি নিবন্ধিত ক্যাম্পে আসা ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ইউএনএইচসিআর খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত ২৪ অগাস্ট মধ্যরাতে রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ স্টেশনে হামলা ও একটি সেনাঘাঁটিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, গুলি করে মেরে ফেলা হয় রোহিঙ্গাদের। প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়ন সহ্য না করতে পেরে হেঁটে ও সমুদ্র পথে বাংলাদেশে আসতে গিয়েও অনেক রোহিঙ্গার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে নৌকাডুবিতেই বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ