নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ একটি বন্যা প্রবণ দেশ। একদিকে উজানের ঢলের পানি, অন্যদিকে অতিবৃষ্টিজনিত কারণে প্রায়ই অকাল বন্যা, বিলম্বিত বন্যা আর জলাবদ্ধতার জন্য ফসল তলিয়ে যায়। এর ফলে সময়মতো যেমন ফসল ফলানো যায় না, আবার ধানের বীজতলাও তৈরি করা যায় না। বিশেষ করে রোপা আমন মৌসুমে বীজতলা তৈরি করতে না পেরে প্রায়ই কৃষকদেরকে চারা সঙ্কটে ভুগতে হয়। তখন বিলম্বে বীজতলা তৈরি করতে হয় অথবা অন্য এলাকা থেকে চড়া দামে চারা কিনে আনতে হয়। কখনো কখনো চারা রোপণের সময়ও পেরিয়ে যায়। আর এই সমস্যা মাথায় রেখেই এ বছর কৃষি মন্ত্রণালয় সারা দেশের নিচু এলাকায় রোপা আমনের ভাসমান বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য দেখিয়েছে।
কিশোরগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় এবার ভাসমান বীজতলা তৈরি করে উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। ৬৭ জন কৃষক মোট ১৪৬টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম।
কিশোরগঞ্জের অনেক নিচু এলাকা রয়েছে। যেখানে বর্ষার পানি নেমে যাবার পর রোপা আমনের বীজতলা তৈরি করতে হয়। কিন্তু এসব এলাকার বর্ষার পানি নামতে বেশ বিলম্ব হয়। যে কারণে প্রায়ই এসব এলাকায় আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব এলাকার জন্যই এবার থেকে ভাসমান বীজতলা তৈরির উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে উপ-পরিচালক জানিয়েছেন।
উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ব্লকের কৃষক ময়েজ উদ্দিন, কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী ব্লকের কৃষক মল্লিক মিয়া ও জালালপুর ব্লকের কৃষক দীন ইসলাম এবং বাজিতপুর উপজেলার উত্তর পিরিজপুর ব্লকের কৃষক মুছা মিয়াসহ জেলার ৬৭ জন কৃষক মোট ১৪৬টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছেন। কোনো কোনো কৃষক একাধিক বীজতলা তৈরি করেছেন। প্রতিটি বীজতলার চারা এক বিঘা (৩৫ শতাংশ) জমিতে রোপণ করা যাবে।
এসব ভাসমান বীজতলায় ‘বিনা-৭’ এবং ‘ব্রিধান-২২’ জাতের ধানের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। তবে ‘বিনা-৭’ ধানের বীজতলাই বেশি। একটি বীজতলা (বেড) দৈর্ঘ্যে ১৫ মিটার, প্রস্থে দেড় মিটার। কচুরিপানা দিয়ে বীজতলাগুলো তৈরি করা হয়। এই বীজতলার চারা বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে থাকে। এই বীজতলায় কোনো আলাদা সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না, সেচও দিতে হয় না। ফলে এ ধরনের বীজতলা কৃষকদের জন্য অনেক সাশ্রয়ী। এসব বীজতলার অল্প বয়সের চারা জমিতে রোপণ করলে ফলনও ভালো হয় বলে এ কৃষি কর্মকর্তা জানান।
এসব বীজতলার বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। আমনের চারাগুলো তুলে নেয়ার পর এসব ভাসমান বীজতলা হয়ে যাবে ভাসমান সবজি বাগান। আবার শুকনো মৌসুমে এসব বীজতলা ভেঙে এর পচা কচুরিপানা জৈব সার হিসেবে অন্যান্য ফসলের জমিতে প্রয়োগ করা যাবে।
উপ-পরিচালক আরো জানিয়েছেন, কৃষি সম্প্রসারণের প্রধান কার্যালয় থেকে এবার কিশোরগঞ্জে ৩০টি ভাসমান বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধকরণের ফলে ৬৭ জন কৃষক মোট ১৪৬টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছেন।
এবছর কিশোরগঞ্জে মোট ৮১ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ধান ৪৫০ হেক্টর, উফশী ধান ৭৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান ৭ হাজার ৬১৮ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৯৯৬ মেট্রিকটন।
ভাসমান বীজতলা তৈরির প্রক্রিয়া যদি সকল কৃষকের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে আগামীতে বন্যার কারণে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিঘ্নিত হবে না বলে উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম মনে করেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ