নিজস্ব প্রতিবেদক:
ত্রাণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুদ্র একটি অম্লমধুর অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করা যাক। আমি তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। সময়টি ২০০৪ সম্ভবত। অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত। মফস্বলের ঐ এলাকাটিতেও উপর্যুপরি বন্যার পানিতে জলমগ্ন হচ্ছিলো বিভিন্ন এলাকা। স্বাভাবিকভাবেই ছাত্র-শিক্ষক, কর্মচারী সকলেই ভোগান্তির সম্মুখীন। ছুটির জন্য অনুমতি প্রার্থিত হলো হুজুরের (ভিসি মহোদয়) দরবারে। জরুরি সভা ডাকলেন তিনি। গম্ভীর বজ্রনাদে আমাদের সকল আবদার ঘুচিয়ে দিয়ে উল্টো দু’দুটো নির্দেশনা অর্পণ করলেন। প্রথমত দুই দিনের বেতন কর্তনপূর্বক বন্যার্তদের তহবিলে প্রদান। দ্বিতীয়ত, একটি নির্দিষ্ট দিনে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যে শুকনো খাবার তথা রুটি বানানোর কাজে সহায়তা করা।
প্রথমটিতে কারো কোনো আপত্তি পরিলক্ষিত হয়নি। দ্বিতীয় ঘোষণায় আমার মত অনেকেরই ‘আত্মারাম খাঁচাছাড়া’হবার উপক্রম হলো। যথানির্দিষ্ট দিনে রুটি প্রস্তুতকরণে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়লাম সম্মিলিতভাবে। সেখানে আমার মত আনাড়ি নবীশের পাশাপাশি দুর্ধর্ষ প্রতিযোগীও ছিলেন, যারা মিনিটে গোটা দশেক রুটি খণ্ড প্রস্তুত করছিলেন।
মুশকিল ঘটলো তারপরেই। উৎসাহ-উদ্দীপনায় দ্রুততম উপায়ে বানানো শত শত রুটিগুলো একটি অপরটির সঙ্গে আটকে যেতে লাগলো। নিম্নবিত্ত কর্মী নারীরা শহুরে স্যার-ম্যাডামদের কাণ্ড কারখানা দেখে চাক্ষুষ ‘বাংলা চলচ্চিত্র’ফিল্ম দেখার আনন্দে বিভোর।
যেন শহুরে বাবু-বিবি অকস্মাৎ গ্রাম পরিদর্শনে নাকাল হচ্ছেন। কিছু রুটি সেঁকতে গিয়ে দেখা গেলো অর্ধসেদ্ধ থেকে যাচ্ছে। তারাও জানালো ঐ কাঁচা রুটিগুলো সমুদয় বানের জলে ভাসিয়ে দিতে হবে, নয়তো ঐ জলেই ভিজিয়ে খেতে হবে। কর্তব্যকর্ম মোটামুটিভাবে বানের জলে ভেসে গেলেও আমরা বেশ উৎসবের আমেজেই ঘরে ফিরতে পেরেছিলাম।
০২.
বাঙালির উৎসবের ইতিহাস তার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিরই সমবয়সী। চর্যাপদেও আমরা পেয়েছি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উৎসবের দৃশ্য। যেখানে শবর-শবরী ফুলের মালায় সুসজ্জিত হয়ে, চোলাই মদ পান করছে, রাত্রিভর নাচ-গানের আয়োজন হচ্ছে।
মোরাঙ্গ পীচ্ছ পরহিন সবরী গিবত গুঞ্জরী মালী
অথবা
এক সো পদমা চৌষট্টি পাখুড়ি।
তহি চড়ি নাচ অ ডোম্বী বাপুড়ি
বাঙালির উৎসব ছিলো প্রধানত ঋতুভিত্তিক। ফসল তোলার দিনে হেমন্তের ‘নবান্ন’ছিলো অর্থনৈতিক প্রশান্তিসূচক প্রেক্ষাপট। বিভিন্ন দেবতার পূজা অর্চনাগুলো মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিষ্কৃতি পাবার প্রাকৃতিক যোগসাধনার প্রতিরূপ বলা যেতে পারে। যেমন- সাপের দেবী মনসা, ওলাওঠা বা কলেরা রোগের জন্য ওলাবিবি বৃষ্টির জন্য ভূমিকে শীতল করতে শীতলা দেবীকে আহ্বান প্রভৃতি।
নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের গতিপথ বেয়ে সমাজকাঠামো বদলায়। সমাজকাঠামোর প্রধানতম অনুষঙ্গই সংস্কৃতি। উৎসব সেই সংস্কৃতির ইতিবাচক শক্তি। উৎসব সম্মিলিত করে, চিত্তকে উদ্বোধিত করে। তাই দেখা যায় অধিকাংশ উৎসবই শেষ পর্যন্ত ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী নির্বিশেষে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। উৎসবেও প্রতিনিয়ত যোগ-বিয়োগ ঘটতে থাকে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা পান্তা-ইলিশ খাওয়া, এমনকি যে-কোনো বাঙালিয়ানা উৎসবে পুরুষের পাঞ্জাবি পরিধান সংস্কৃতির নব্য সংযোজন। ধর্মীয় নৈতিকতার সঙ্গে সমাজের নৈতিকতার বিরোধে জয়ী হওয়ার ঘটনা ইতিহাসের সবচাইতে ইতিবাচক দিক।
কিন্তু ধর্ম যখন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীবদ্ধ সংকীর্ণতায় ঘুরপাক খেতে খেতে সংখ্যাতত্ত্বে এসে দাঁড়ায়, অবমানিত মানবতা তখন ‘সংখ্যালঘু’শিরোনামে অট্টনাদ করতে থাকে। ব্রিটিশের দিয়ে যাওয়া ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’কে বাস্তবায়িত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তাই হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ আর বাস্তুভিটা দখলের মাধ্যমে বিগত পাঁচ দশকে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত ১ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দুই দশক পর দেশে আর ‘সংখ্যালঘু’ চিহ্নিত কোন অস্তিত্ব বিরাজ করবে না।
উল্টোদিকের চিত্রও সুখকর নয়, ভারতে গরু জবাই এবং মাংসভক্ষণের অপরাধে মুসলমান হত্যা চলছে। অর্থাৎ, সংখ্যালঘুর মূলত কোনো দেশ-কাল-পরিচয় থাকে না। তার একমাত্র পরিচয় সে ক্ষমতাপরিধি থেকে বিচ্যুত শ্রেণী। পৃথিবীর বুকে কোথাও গাত্রবর্ণে, কোথাও ধর্মের অজুহাতে শোষিত-প্রহৃত হচ্ছে এই শ্রেণীটি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’ উপন্যাসে চমৎকারভাবে বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিলো। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এরা প্রত্যেকেই এই উপমহাদেশে বহিরাগত। যদিও উনিশ শতকের প্রেক্ষাপটে এরা প্রত্যেকেই ভাবছিলো দেশটা তাদেরই।
সুফিবাদ বিশ্বাসী মুসলিমদের আগমন ঘটে মূলত পারস্য থেকে। যারা একসময় অগ্নিপূজক ছিলো। তাছাড়া সুফীবাদের মাধ্যমে মাজার সংস্কৃতি, তাবিজ/কবচ, মাইজভাণ্ডারি গান, বায়েজীদ বোস্তামির পুকুরের কচ্ছপ, খানজাহান আলীর কুমির, হযরত শাহজালালের জালালী পায়রা-এই সব প্রতীক রূপকের আপাত ‘বেদাতী’কাজের মাধ্যমে সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় বাঙালির ধর্মান্তরিত হবার ইতিহাসকে। মাজার যে সর্বধর্মের জন্য উন্মুক্ত থাকে, সেই বৈশিষ্ট্য এই কাদামাটি অঞ্চলের সহজিয়া মানুষদের আকৃষ্ট করেছিলো।
কাজেই মঙ্গল শোভাযাত্রা, তাজিয়া মিছিল, রমনার গান- যুগে যুগে ধর্মীয় সংস্কৃতি সামাজিকভাবে গৃহীত হয়েছে, কালান্তরে তা সমাজের সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। চৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্মে, সুফীবাদ কিংবা বৌদ্ধ সহজিয়াদের অহিংস নীতির পরিশ্রুত রূপটিই বাঙালির প্রকৃতরূপ।
কিন্তু শাক্ত ব্রাহ্মণদের বলিদান কিংবা চেঙ্গিস-হালাকুর (পাঠাগার পোড়ানো) হিংস্রতাকে কি বলব? আরোপিত? আরোপিত সংস্কৃতি কদিন চালু থাকতে পারে। বরং মঙ্গল শোভাযাত্রায় নিকৃষ্টভাবে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে। গ্রন্থমেলায় লেখক খুন হয়েছে। চাঁদা না পেয়ে শিশুর আঙ্গুল কর্তিত হয়েছে। শিশু হত্যা, আর ধর্ষণকে এই জাতি প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
নদীমাতৃক দেশটির নদীমুখগুলো যতই বন্ধ হয়ে আসছে, একইভাবে মানুষগুলোর অন্তরের পলি শুকিয়ে ক্রমেই মোঙ্গোলিয়ান ঊষর বর্বরতার রূপটি প্রস্ফূটিত হচ্ছে। তাই পাঠাগার পোড়ানোর সেই ইতিহাস ফিরে আসে পেট্রোল বোমার রূপ ধরে, কখনো শিশুপাঠ্য কোটি কোটি টাকার পুস্তকাদিতে অগ্নিসংযোগে।
নৃশংসতাকেও এখন আমাদের পূর্বপুরুষবাহিত রক্তেরই উত্তরাধিকার ভাবতে বাধ্য হতে হচ্ছে। সব দেখেশুনে ডারউইনের তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে মন চাইছে। কারণ বানর বা শিম্পাঞ্জীতে হিংস্রতা বা সমধর্মী হত্যাপ্রবণতা অনুপস্থিত। আমরা কি তবে নেকড়ে-হায়েনার চাইতেও ভয়ংকর কোন অজানা প্রাণীর বংশজাত?
০৩.
শুরুতে বলছিলাম বন্যার কথা। এবারের কোরবানি ঈদের অব্যবহিত পূর্বে দেশের একটি বৃহত্তর অংশ ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় উৎসবের আনন্দ বানের জলে ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। তবে এটি সার্বিক চিত্র নয়।
ত্রাণ বিতরণ কর্মকাণ্ডকে উপলক্ষ করে দেশব্যাপী উৎসবময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। উৎসবপ্রিয় বাঙালি মধ্যবিত্ত আজকাল নেতার মৃত্যু, জাতীয় শোক বা দুর্যোগেও রঙ মিলিয়ে সাজপোশাক করছে, উৎসবের জোয়ারে দেশীয় বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটছে।
তেমনিভাবে দলবেঁধে বনভোজনে যাবার উৎসাহে ত্রাণ বিতরণ এবং তৎপরবর্তী আলোকচিত্রাবলীর ঘনঘটাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে ব্যথিত হবার কিছু নেই। বরং সুশীল মধ্যবিত্ত সমাজের পক্ষ থেকে বিপন্ন মুহূর্তে দুর্গত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ‘অ্যান্টিক’সাবজেক্ট হিসেবে মূল্যায়িত করা অথবা তাদের মিডিয়া রিপোর্টিং-গল্প-উপন্যাসের কাঁচামাল হিসেবে বিবেচনায় আনলেও শেষাবধি উভয়পক্ষেরই লাভ।
অন্যদিকে ‘রিলিফওয়ার্ক’গল্পের সেই রক্ষকরূপী তক্ষকেরা আজো সদর্পে বিদ্যমান। রক্ষকেরা ভক্ষণ করে চলেছে দেশের আগাপাশতলা। সেলিম আলদীন সৃষ্ট সেই বিখ্যাত চরিত্র সিরাজ তালুকদারের মত তারা এই সুযোগে বড় বাজারে আলু পোড়ার স্বাদ নিতে ঘ্রাণ শুকঁতে শুঁকতে পৌঁছে গেছে, আর মনে মনে বলছে, ‘আমি তো জমি কিনি না, পানি কিনি।’
০৪.
বাঙালি স্বভাবতই বাহাসপ্রিয়। তাই তার শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় আখড়াই, হাফ-আখড়াই নামে বিতর্কভিত্তিক সাঙ্গীতিক চাপান-উতোরের রীতি পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো। তাও আবার পরাধীন ব্রিটিশ শাসনকালে। প্রতীকের আড়ালে অ্যান্টনি-ফিরিঙ্গিরা প্রতিবাদের পথ সৃষ্টি করেছিলো। সেই সুগভীর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি আজ কোথায়?
আমরা তো আজ নায়কের মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যায়, অতি উত্তেজনায় জিহাদ করতে প্রস্তুত হয়ে যাই। ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার মতো না-দেখা দেশের পরাজয়ে আমাদের দেশে আত্মহত্যার মত ঘটনাও ঘটেছে। হুজুগে বাঙালি, তর্কপ্রিয় বাঙালি, উৎসবপ্রিয় বাঙালির জাতিগত চারিত্র্যমস্তিষ্কের কোথাও গোলোযোগ ঘটে গেছে।
খুব দ্রুতই তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তাই বন্যা ও কোরবানি নিয়েও যথারীতি বিতর্ক-বাহাস শুরু হয়েছে। আখড়াই-হাফ আখড়াই। রয়েছে যুক্তি আর প্রতিপক্ষের প্রতিযুক্তিও। যুক্তি এক অদ্ভুত গোলকধাঁধা, যে-পথ কখনো ফুরায় না।
কোরবানি উৎসব হবে, নাকি কোরবানিকে কোরবান করা হবে। পশু জবাই কি অবধারিত, নাকি প্রতীকী অর্থে দুর্গতদের জন্য নির্ধারিত অর্থ প্রদান করা যাবে? একদিকে ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন্দ্র করে আলোড়িত জনতার বিপক্ষ ভূমিহারা নিরন্ন মানুষ। অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ এইসব সমস্যার মূলে পৌঁছাতে ইচ্ছুক।
তাদের যুক্তি, একদিনের সাহায্যে হয়তো সর্বোচ্চ সাতদিনের সংস্থান হবে দুর্গত মানুষের। কিন্তু সারা দেশব্যাপী এই উৎসবমুখর আমেজটি সমস্যার কেন্দ্রীভূত মূল জায়গা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যেখানে কেবল ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক আস্ত একটি মন্ত্রণালয় রয়েছে সেখানে তাদের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়ার জনমত সৃষ্টি করাটাই হয়তো একদিকে থেকে যৌক্তিক ছিলো।
ত্রাণ বিতরণকারী সহায়তা দলটি তাই উভয় দিক থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন। তাদের দিককার যুক্তিটির পাল্লা সবচাইতে ভারি। কারণ, তাদের পাল্লায় রয়েছে ‘মানবতা’নামক আপাত শক্তিশালী প্রপঞ্চ। এই মুহূর্তে আমরা দশটি মানুষের প্রাণ বাঁচাবো, নাকি ভবিষ্যতের সুদূরপ্রসারী স্বদেশ-রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত ভবিষ্যৎ বাঁচাতে আন্দোলনে নামব- এ নিয়ে দেশের মানুষ যথারীতি ত্রিধাবিভক্ত।
এমনটা কি হতে পারতো না- ধর্ম, মানবতা এবং রাষ্ট্রের ব্যানারে ত্রিধাবিভক্ত এই মানুষেরা সবগুলোকে সমন্বয় করতে একটি ব্যানারের সামনে সমবেত হতো। যুক্তির উত্তরে প্রতি যুক্তিটি হলো, এই বিভক্তি আর বৈষম্য অশেষ, কারণ এটি চক্রাকৃতির এবং বলতে নেই খানিকটা ভৌতিকও।
অরুন্ধতী রায় পুঁজিবাদকে নাম দিয়েছেন Ghost Story. আমরাও উপনিবেশবাদের পরবর্তী জ্বীন-ভূতের আছরে আবিষ্ট হয়ে আছি অনির্দিষ্টকাল ধরে। আমাদের চরিত্রে তাই রোমাঞ্চকর অনিশ্চয়তা আর ভৌতিক অস্পষ্টতার মেলবন্ধন ঘটেছে।
আমরা তাই কাকে অভিযোগ করবো, কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো, এসব নির্ধারণ করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির উপহার বৃষ্টিকেই দোষারোপ করতে শুরু করি। হা হতোস্মি! যদিও আমরা জানি, দেশটি সমুদ্রতীরবর্তী মৌসুমীবায়ু প্রধান অঞ্চল, প্রতিবছর স্বাভাবিকভাবেই নির্দিষ্ট সময়ে অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবেই।
আমরা এটাও জানি, অতিবর্ষণ, প্রতিবেশী দেশের সাথে পানিবণ্টন সংক্রান্ত জটিলতা, সময়মতো নদীর ড্রেজিং না হওয়া, বিকল্পে খাল খননে পানির গতিপথ ছড়িয়ে না দেয়া ইত্যাদি কারণে স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিক জলাবদ্ধতা বা বন্যার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত।
সর্বোপরি, অনাবৃষ্টির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আমাদের অজানা নেই, যেখানে এতদঅঞ্চলের তাপমাত্রা ক্রমবর্ধমান। আসলে প্রকৃত সমস্যাকে এড়িয়ে উদ্বৃত্ত আলাপে এই জাতির সঙ্গে কারো জুড়ি মেলা ভার।
০৫.
তার চাইতে আপাতত দুর্যোগ বিষয়ক অলক্ষুণে প্রসঙ্গ সরিয়ে রেখে ঈদে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি গ্রহণ করি। না হয় সকলে টিকিট পাবেনা, অপর্যাপ্ত যানবাহনেও সকল প্রকার শ্রেণী বৈষম্যকে মনের ভেতর চেপে, ট্রেন-বাস-লঞ্চের ছাদে চড়ে বসবে কিছু তুচ্ছ মানুষ।
লোভী পেশাজীবীদের সৃষ্ট অনিয়মের শিকার হবে তারা। হারিয়ে যাবে লঞ্চডুবি, কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায়। চলন্ত বাস থেকে ভূতেরা ঘাড় মটকে ফেলে দেবে রূপাদের।হ্রস্ব-দীর্ঘ কোনো ঈদেরই সন্ধান মিলবে না বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্র নামক সীমানার পরিচয়হীন শরণার্থীদের।
তবু আমরা ক্রমশ শূন্য হতে থাকা শহরে অথবা ভিড় বাড়তে থাকা শহরতলীর কোথাও লেগরোস্টের রেসিপি, গরমে মেকাপ না গলে যাবার টিপস অথবা বিচারপতির বিচার নিয়ে আপাতত ব্যস্ত হয়ে পড়ব, টেলিভিশনের সহস্রাধিক প্যাকেজ অনুষ্ঠান উপভোগ করতে করতে।
তবুও, উৎসবপ্রিয় বাঙালির উৎসবটি যেন বানের জলে ভেসে না যায়।
রোখসানা চৌধুরী : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ। বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ