স্বাস্থ্য ডেস্ক:
সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। পানি খাওয়ার এক ঘণ্টা পর নাস্তা করুন। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটা এক ধরণের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা যা হাঁপানি, ব্যথা এমন কি ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। মনে রাখবেন, সকালে পানির বদলে জুস বা অন্য পানীয় না খাওয়াই শরীরের জন্য ভালো। সকালে প্রতিদিন খালি পেটে পানি খেলে রক্তের দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায় এবং ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়। রাতে ঘুমানোর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে হজম প্রক্রিয়ার তেমন কোনো কাজ থাকে না। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য অন্তত এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়া উচিত। প্রতিদিন সকালে নাস্তার আগে এক গ্লাস পানি খেলে নতুন মাংসপেশী ও কোষ গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। প্রতিদিন সকালে অন্তত ১৬ আউন্স হালকা গরম পানি খেলে শরীরের মেটাবলিসম ২৪% বেড়ে যায় এবং শরীরের ওজন কমে।
প্রতিদিন খালি পেটে এক গ্লাস করে পানি খেলে মলাশয় পরিষ্কার হয়ে যায় এবং শরীর নতুন করে খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে সহজেই।
প্রতিদিন সকালে মাত্র এক গ্লাস পানি খেলে বমি ভাব, গলার সমস্যা, মাসিকের সমস্যা, ডায়রিয়া, কিডনির সমস্যা, আর্থাইটিস, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি অসুখ কমাতে সহায়তা করে।
আপনি কেন পানি পান করবেন, তার অসংখ্য কারণের মধ্য থেকে কিছু কারণ তুলে ধরা হলো:
ত্বক কুচকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে : ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ রাখতে প্রচুর পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন পানি পান কর ত্বকে চর্বি দ্রুত গলান সম্ভব তাতে আপনার শরীরের ভেতরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন সজীব ও প্রাণবন্ত থাকবে, তেমনি আপনার ত্বক হয়ে উঠবে কমনীয়, মসৃণ ও সুন্দর।
পানি ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে :
পানি পানের অনেক সুবিধা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল যে এটি আপনার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে। প্রতেহ্য ১ লিটার পানি পান ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে।
টক্সিনের জমতে দেয় না : ত্বকে টক্সিনের উপস্থিত কারণে সাধারণত ত্বক ফোলা লাগে, প্রতিদিন অন্তত আট থেকে 10 গ্লাস পান করলে এই টক্সিনের জমে না এটি ঘাম আকারে অথবা মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। প্রচুর পানি পানের ফলে আপনার শরীরের সঞ্চিত চর্বি গলে যায়, যা আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলে। ফলে এটি মোটা কমাতে ও সাহায্য করে।
বলি রেখা বা ভাঁজ কমিয়ে দেয় : পানি আপনার ত্বকের স্থিতি স্থাপকতা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। যারা পর্যাপ্ত পানি পান করে তাদের ত্বকে দাগ, বলি রেখা, ব্রণ, কম দেখা যায়।
কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে : কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পানি পানের প্রয়োজন। আমাদের কিডনি শরীর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর বর্জ্য যেমন- ইউরিক অ্যাসিড, ইউরিয়া ও ল্যাকটিক অ্যাসিড বিশেষ ছাঁকন প্রক্রিয়ায় অপসারণ করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান না করলে, আপনার কিডনি এ বর্জ্যসমূহ কার্যকর ভাবে অপসারণ করতে পারে না। আর তাতে কিডনি বিকল পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশের সংযোগ পেশীসমূহকে দৃঢ়, মজবুত, স্থিতিস্থাপক, পিচ্ছিল ও নমনীয় রাখতে পর্যাপ্ত পানি পানের প্রয়োজন।
মাইগ্রেনের সমস্যায় : যারা মাইগ্রেনের সমস্যায় আক্রান্ত, তাদের জন্য পানি ওষুধের ভূমিকা পালন করে। কখনও কখনও মাইগ্রেনের মাথাব্যথা হয় শরীরের তাপমাত্রায় তারতম্যের কারণে। ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ। তাই আপনার উচিত মাইগ্রেনকে দূরে রাখতে বেশি বেশি পানি পানের অভ্যাস গড়ে তোলা।
পানি পান করা কিভাবে ও কখন বাড়াবেন?
-আপনার অফিসের ডেস্কে, পড়ার টেবিলে, বা হাতের কাছে সব সময় পানির বোতল রাখুন, একটু পর পর পানি পান করুন।
– অনেকে পানি না পান করে আলসেমি করে বসে থাকেন, তাই হাতের কাছে সব সময় পানি রাখুন।
-আপনার শরীরের কথা শুনুন, পানি না পান করে বসে থাকবেন না, যখনি একটু হলেও তৃষ্ণা পাবে, পানি পান করুন।
-পানি পান করা বাড়াতে, সুন্দর আকারের/ দেখতে সুন্দর পানির বোতল সাথে রাখুন।
-সুন্দর কাপ বা গ্লাসও ব্যবহার করতে পারেন
-খাবার খাওয়ার আগে পানি পান করুন। কারণ এতে আপনি কম খাবার খাবেন, ফলে ওজন কমবে।
-খুব বেশি তৃষ্ণা পাবার আগেই পানি পান করুন।
-একটু পর পর পানি পান করা, অভ্যাসে পরিণত করুন।
-প্রয়োজনে দিনে কত গ্লাস পানি খাচ্ছেন, তা গুনুন।
-প্রতিবেলা খাবার খাওয়ার পরে ও পরবর্তী বেলা খাবার খাওয়ার মাঝে পানি পান করুন।
-সকালে উঠেই খালি পেটে, সকালের নাস্তা খাবার আগে বা চা পান করার আগে, এক/দুই গ্লাস পানি পান করুন।
-রাতের খাবারের আধা ঘণ্টা আগে দুই/তিন গ্লাস পানি পান করুন।
-ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে আবার এক গ্লাস পানি পান করুন।
-খালি পানি পান করতে ভালো লাগে না? তাহলে পানির সাথে একটু লেবু চিপে খান, এছাড়া পানির সাথে কিছু পুদিনা পাতা বাটা মেশাতে পারেন।
-পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খান যেমন : তরমুজ, আনারস, কমলা, জামরুল, যেকোনো রসালো ফল, সালাদ, টমেটো,ইত্যাদি।
-অতিরিক্ত গরমের দিনে যখন প্রচণ্ড ঘাম হয়, তখন বেশি বেশি পানি পান করুন।
-পানি আপনার শরীর ঠাণ্ডা রাখবে, সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিক মতো কাজ করবে।
-গরমের দিনে পানির অভাবে আপনার মাথা ঘুরতে পারে,গরমের দিনে ডাবের পানি খেতে পারেন।
-শরীর দুর্বল লাগলে স্যালাইন, গ্লুকোজ মিশানো পানি বা ডাবের পানি পান করুন।
তথ্য ও ছবি : ইন্টারনেট
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ