২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:৩৫

জিরো পয়েন্টেও চড়াও মিয়ানমার, আতঙ্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হয়েছে মুসলিম রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশে ঢুকতে না পেরে নারী-শিশুসহ অসংখ্য রোহিঙ্গা জিরো পয়েন্টে গত শুক্রবার থেকে অবস্থান করছেন। হঠাৎ করেই সোমবার তাদের ওপর চড়াও হয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত পুলিশ বিজিপি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের অন্তত ৪০ জন সেনা মহড়া দেন। তাদের দেখে জিরো পয়েন্টে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন।

এ সময় বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবিও কড়া অবস্থান নেয় এবং জিরো পয়েন্ট থেকে সবাইকে সরে আসার নির্দেশ দেয়। প্রায় একই সময়ে মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সীমান্তের এই পাড় থেকে আগুনের কুণ্ডলি ও ব্যাপক পরিসরে ধোঁয়া দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ফের হত্যাযজ্ঞ এবং জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে।

বিগত কয়েক দশক ধরেই রক্তাক্ত মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন। রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনি জান্তা সরকার। মাঝে মাঝেই তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের নির্মমতা। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে উগ্রপন্থী বৌদ্ধারাও চালায় হত্যাযজ্ঞ। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া আর রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ যেন নিত্য ব্যাপার।

চলতি মাসের শুরুতে রাখাইনে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর বদলা নিতেই রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ পোস্টে হামলা ও একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়। গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাদের এমনই এক হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

কমিশন রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানায়। প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন করে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমার। এই সংঘর্ষে সোমবার সকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে ১২ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন।

তবে রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের দাবি, নতুন করে ৮ শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি (এআরএসএ) এক টুইট বার্তায় এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে এআরএসএ জানায়, তারা ২৫টির বেশি এলাকায় আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

সংগঠনটি দাবি করে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় রাথেতুয়াং শহর এলাকা গত দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ। সেখানে রোহিঙ্গারা না খেয়ে মারা যাচ্ছেন। মাউংদোতেও তারা যখন একই কাজ করতে যাচ্ছিল, তখন বার্মিজ উপনিবেশিক বাহিনীকে হটাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছি।

বরাবরের মতো গত বছরের অক্টোবরে এ ধরনের সংঘর্ষের পর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। পরে তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের পরও একইভাবে স্রোতের বেগে সীমান্তে আসছে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত। এসব এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনী বিজিবির কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও তারা রাতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে।

ইতোমধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসা দুই রোহিঙ্গা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। স্থানীয়দের ধারণা, অন্তত ৩ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :আগস্ট ২৮, ২০১৭ ১:৩৮ অপরাহ্ণ