শিল্প–সাহিত্য ডেস্ক: স্ট্রাফ রিপোর্টার
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রবিবার । বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত এ মনীষা ১৯৭৬ সালের এদিনেই পিজি হাসপাতাল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে সপরিবারে কবি নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ‘জাতীয় কবি’র মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। জাতীয় কবি নজরুল ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামীকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে। এ উপলক্ষে কাল বাদ ফজর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরানখানি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ জমায়েত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। কবির সমাধি প্রাঙ্গণে উপাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী।
বাংলা একাডেমিও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় কবির ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে। এ উপলক্ষে কাল সকাল ৭টায় একাডেমির পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতিত্ব করবেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান স্বাগত বক্তৃতা দেবেন। অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর নজরুল বিষয়ে একক বক্তৃতা প্রদান করবেন। সন্ধ্যায় থাকবে নজরুলসঙ্গীতের পরিবেশনা। এতে দেশের খ্যাতিমান শিল্পীগণ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নজরুল ইনস্টিটিউট ‘নজরুল পদক-২০১৬’ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আগামীকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ছায়ানট নজরুলের প্রয়াণবাষিকী উপলক্ষে আজ সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। -বাসস
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় শনিবার দুপুরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, মানবতা ও সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ক্ষূরধার লেখনীর মাধ্যমে সকল রকম অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার আর জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তার অনন্য সৃষ্টিতে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে।’
সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে কাজী নজরুল ইসলাম তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেননি উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমকে বিদ্রোহ করার প্রেরণা যুগিয়েছেন কাজী নজরুল। তার রচিত কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির ভান্ডার কে করেছে সমৃদ্ধ। শোষণের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম তাকে ‘বিদ্রোহী কবি’র খ্যাতি এনে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের সামনে চলার অন্তহীন প্রেরণার উৎস। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার কবিতা ও গান যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধা ও এদেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, উজ্জীবিত করেছে। আজো আন্দোলন সংগ্রামে তার কবিতা ও গান আমাদেরকে শক্তি ও সাহস জোগায়।’তিনি বলেন, ‘মানব প্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মানুষকে ভালোবেসে তাদের কল্যাণে আত্মনিবেদিত হতে তার রচনা আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। তার সাহিত্যকর্ম আমাদেরকে চিরকাল স্বদেশ প্রেমে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এক বার্তায় বলেন, ‘কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় জীবনে এক অন্তহীন প্রেরণার উৎস। তার রচনা আমাদেরকে স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। সমাজে শান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণে আমাদেরকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব (দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানা যায়।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ