কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :
ইয়াবা, মাদকদ্রব্য ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক জরুরী সভা গতকাল শনিবার সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত উপজেলা অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে এ জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোছেন, জেলা পুলিশ সুপার ড. মোঃ একেএম ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাউলাও মার্মা, উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের, বিজিবির মরিচ্যা চেক পোষ্টের সুবেদার নজরুল ইসলাম। এ সময় বক্তব্য রাখেন, উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছেনুয়ারা বেগম, উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, রতœাপালং ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী, পালংখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মোজাফ্ফর আহমদ সওদাগর, ধর্মীয় নেতা উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মৌলানা রফিক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম ও জালিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, কোন অবস্থাতেই একজন রোহিঙ্গাকেও আর এদেশে ঢুকতে দেওয়া হবেনা। মানবতার নামে আর একজন রোহিঙ্গাকেও সীমান্ত ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হবেনা। মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের নিয়ে যা কিছু সমস্যা তা তাদের দেশের অভ্যন্তরিন এবং তারাই সমাধা করবে। মিয়ানমারে হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এবার ঠেকাতে হবে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল বলেন, এখানকার মানুষ রোহিঙ্গাদের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে বনভূমি ও সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে। তাই সবার সহযোগীতা চেয়েছেন।
ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৩০ উপজেলাকে ‘বিশেষ উপজেলা’ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে এসব উপজেলায় রোহিঙ্গারা ভোটার হতে পারে এমন আশংকায় বিশেষ উপজেলা ঘোষণা করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গা ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। বিশেষ উপজেলাগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামস্থ সার্কিট হাউজে বিশেষ সভার আয়োজন করেছে ইসি। সভায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলা প্রশাসকও উপস্থিত থাকবেন। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে প্রধান অতিথি থাকবেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
৩০ বিশেষ উপজেলা হলো চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালী। কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলা, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবান জেলার সদর উপজেলা, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যছড়ি। রাঙামাটি জেলার সদর উপজেলা, লংঘদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুড়াইছড়ি ও বরকল।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনির হোসাইন বলেন, হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে, এ জন্য জেলা ও উপজেলায় উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ কমিটি রয়েছে। রোহিঙ্গা ঠেকাতে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা এবং নগরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করছেন। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৬ দিনে নগরী ও জেলা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৫১ জন নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদী পাড়ি দিয়ে উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু করে সমতল পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ আছে, তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ভোটার হওয়া ছাড়াও পাসপোর্ট করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। প্রতিবার ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন থেকে কঠোর নির্দেশনা জারী করা হয়। এবারও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।