নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোবরাতলা ইউনিয়নের পালশা গ্রামের মনিরুল ইসলাম কুরবানির ঈদ সামনে রেখে ৪ মাস আগে ৯৫ হাজার টাকায় একটি গরু কিনে লালল-পালন করেছিলেন। শুক্রবার ওই গরু বিক্রি করেছেন ৯১ হাজার টাকায়। মনিরুল জানান, প্রতিদিন ১৩০ টাকা করে খাওয়ার খরচ হয়েছে একটি গরুর পেছনে। আর সেই হিসাবে তার অন্তত ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। নিজে ও পরিবারের সদস্যরা শ্রম দিয়েছেন। আশা করেছিলেন কোরবানির হাটে ভালো দাম পাবেন কিন্তু তার সেই স্বপ্ন, স্বপ্নেই থেকে গেছে।
শুধু মনিরুল ইসলামই নয়, গ্রামের অনেক গেরস্থ পরিবার কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে মোটাতাজা করা গরুর কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি। শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাঁপাই-পালশা সড়কের পাশেই দেখা যায় দুটি ট্রাকে বাঁশ বেঁধে গরু নিয়ে যাওয়ার উপযোগী করছেন কয়েকজন। এগিয়ে যেতেই জানা গেল এ গ্রামের ৬ জন মিলে তাদের লালল-পালন করা গরু নিয়ে যাবেন চট্টগ্রামে। বিকেলেই রওনা হন।
তাদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম নামে একজন জানান, তারা ৬ জন মিলে প্রায় ৩টি ট্রাকে করে ৬০টি গরু নিয়ে যাবেন। প্রথম ধাপে ৩৪টির মতো গরু নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা নিরূপায়। বাড়িতে তেমন কেউ দামই বলেনি। তাই চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, এ গরুগুলোর মধ্যে আমাদের নিজেদের পোষা গরু আছে, আবার গ্রামের অন্যদের কাছ থেকেও কিছু কিনেছি। লাভের আশায় যাচ্ছি।
মুজিবুর রহমান নামে আরেক বিক্রেতা জানান, তিনি গতবছর নিজের লালন-পালন করা ও গ্রামের কয়েকজনের কাছে কিনে এক ট্রাক গরু চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার প্রায় ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছিল। তাই এবার তিনি গরু লালন-পালন করেননি।
তিনি বলেন, যখন আমরা গরুগুলো মোটাতাজা করার জন্য কিনি, তখন ভারত থেকে গরু আসা কম থাকে। বাজারও চড়া থাকে। কিন্তু ঈদের সময় আমরা যখন বিক্রি করব, তখন ভারত থেকে এতো গরু আসে যে দামই পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, লাভতো দূরে থাক; এবার অনেকেরই ৪ মাস আগে কেনা গরুর দামই পাচ্ছেন না। এভাবে চললে অনেকেই আর গরু পালন-পালন করবে না।
গোবরাতলা ইউনিয়নে জামপুকুর এলাকায় বাণিজ্যকভাবে গড়ে তোলা একটি খামারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উন্নত জাতের প্রায় ২৬টি গরু বিক্রির উপযোগী। সেগুলোকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারের শ্রমিকরা। খামারের মালিক হাসান উল হক বান্না বলেন, অন্য বছরে গরুর পাইকারি ব্যাপারিরা খামারের মালিকদের পেছন ছাড়ে না। অনেকদিন থেকে ঘুরে গরু কেনার জন্য। কিন্তু এবার কোনো পাইকার আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে আমি নিজেই গরুগুলোকে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ খামারি আরো জানান, তিনি ৮২ হাজার টাকা করে একেকটি গরু কিনে গত চার মাস ধরে লালন-পালন করছেন। তিনি বলেন, এবার বাজারের যে অবস্থা তাতে কিছু লাভ হলেই গরুগুলো ছেড়ে দেব। এ গরুগুলো আরো যদি একমাস থাকে তাহলে খরচ আরো বাড়বে, তাই চিন্তায় আছি শেষ পর্যন্ত সবগুলো গরু বিক্রি হবে কিনা।
জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা আনন্দ কুমার অধিকারী জানিয়েছেন, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জেলা সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলায় ৭ হাজার ১৯৩ জন খামারি ৮৪ হাজার ২৯৮টি গরু ও ছাগল পালন করেছেন।
এদিকে জেলা কাস্টমসের তথ্য মতে, এ বছর জুলাই ও আগস্ট মাসে গরু ও মহিষ এসেছে ১ লাখ ৮৭৪টি। যদিও গত বছর জুলাই ও আগস্ট মাসে ভারত থেকে আসা গরু ও মহিষের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ১০৮টি। জেলা কাস্টমস সুপার একে এম মাহমুদ হোসেন জানান, আগের বছরগুলোর তুলনায় ভারতীয় গরু মহিষ আনা সহজ হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর জুলাই ও আগস্ট মাসে ভারতীয় গরু ও মহিষ আসছে অনেক বেশি। ঈদের আগ পর্যন্ত আসা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ