নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর আশকোনার হজ ক্যাম্পে এজেন্সির বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে হজযাত্রীরা জড়ো হচ্ছেন। তাঁদের কেউ হজ এজেন্সিকে টাকা দিয়েও ভিসা ও টিকিট পাননি। কারও অভিযোগ, এজেন্সি যোগাযোগ করছে না। একজন মোয়াল্লেমও এসেছেন। তাঁদের এমন নানা অভিযোগ শেষ মুহূর্তে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই হজ পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী ভিড় করেন। তাঁরা সবাই পবিত্র হজ পালনের জন্য মোয়াল্লেমের মাধ্যমে নিবিড় হজ, ওমরাহ অ্যান্ড ট্যুরিজম নামের একটি এজেন্সিকে টাকা দিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ওই মোয়াল্লেমও ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই এজেন্সি তাঁদেরসহ ভিসা করেনি মোট ৪২ জনের। ফলে তাঁদের যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘এমন জটিলতায় পড়তে হবে বুঝ। এত দিন বলেছে, ২০ আগস্টের পরে ফ্লাইট কিন্তু এখন জানলাম, এজেন্সি আমাদের ভিসাই করায়নি। বুঝতে পারছি না যে হজে যাওয়া হবে কি না,।’
অপর একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, তাঁর মা, বোন ও দুলাভাইয়ের হজে যাওয়ার কথা। কিন্তু নিবিড় নামের এজেন্সি বোন ও দুলাভাইয়ের ভিসা করালেও মায়ের ভিসা করায়নি। এখন এজেন্সি ফোনও ধরছে না। হজ ক্যাম্পে ছিলেন নিবিড় হজ এজেন্সির মোয়াল্লেম মো. আজিজুল হাকিমও। তার দাবি, তিনি নিবিড় হজ এজেন্সিকে ৮৭ জনের হজে যাওয়া বাবদ প্রায় ২ কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু মাত্র ৪৫ জনের ভিসা করেছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে পাঠিয়েছে ৩৩ জনকে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিবিড় হজ এজেন্সির অংশীদার মোহাম্মদ শাকিল বলেন, মোয়াল্লেমের কাছে তাঁদের পাওনা ছিল প্রায় ৬০ লাখ টাকা। সুরাহা হয়েছে বিষয়টি এতে তাঁরা যেতে পারবেন। কিন্তু যাদের ভিসা হয়নি, কীভাবে যাবেন— তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন এমন প্রশ্ন করা হলে জবাব না দিয়ে।
রাজশাহীর বানেশ্বরের মো. আতাউর রহমান হজ পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে কান্নাকাটি করছিলেন। তিনি নিজেকে ইকো এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের একজন দলনেতা (গ্রুপ লিডার) দাবি করে বললেন, তিনি ইকো এভিয়েশনকে ২০১৫ সালে ২১ জনকে হজে নেওয়ার জন্য জনপ্রতি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এজেন্সি ওই বছর পাঠাতে পারেনি। গত বছরও ঘুরিয়েছে। এবার জনপ্রতি আরও ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার পর ২১ জনের ভিসা করেছে। কিন্তু তারা এখন দাবি করছে টিকিট না দিয়ে জনপ্রতি আরও ৪০ হাজার টাকা দাবি করছে। এর উত্তর জানতে চাইলে ইকো এভিয়েশনের অংশীদার মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘তাঁদের দেওয়ার কথা ছিল আড়াই লাখ টাকা করে । কিন্তু আতাউর রহমান দিয়েছেন জনপ্রতি ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। তাই টিকিট দেওয়া হয়নি ওই ২১ জনের। হজ কার্যালয়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
ভুক্তভোগী একজন হজযাত্রী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘ হজযাত্রীরা টাকা জমা দেওয়ার পর নিরুপায় হয়ে পড়েন। জানি না এখন ভিসা ও টিকিট না পেলে কী হবে। হয়তো পরে এজেন্সিকে কিছু জরিমানা করা হবে। কিন্তু তাতে আমার লাভ কী? আমি তো পারলাম না হজে যেতে ।’ ময়মনসিংহের তারাকান্দার নাজিমউদ্দিনসহ আটজনের একটি দল হজ ক্যাম্পে আছেন। তাঁরা বললেন, ২০১৪ সালে ইউরো এশিয়া ট্রাভেলসকে জনপ্রতি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ২০১৫ সালে নেয়নি। এবারও দুই দিন আগে সৌদি আরবে চলে গেছেন এজেন্সির মালিক। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউরো এশিয়া ট্রাভেলসের মালিকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। জানতে চাইলে হজ কার্যালয়ের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, যেসব এজেন্সি হজযাত্রীদের ভিসা ও টিকিট দেয়নি তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদের পরিষ্কার বলা হয়েছে, হজযাত্রীদের নিয়ে কোনো ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। এজেন্সিগুলোর সব রেকর্ড আছে। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন বলেন, যেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। হজযাত্রীদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে সৌদি আরবে পৌঁছানোর। তিনি বলেন, প্রতিবছর কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হজযাত্রীদের ভোগান্তি বন্ধে হজ নীতিমালায় ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। এদিকে গতকালও ভিসা পাওয়া প্রায় ৪ হাজার হজযাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। যাত্রীসংকটের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনসের মোট ৩৩ হজ ফ্লাইট বাতিল বা পেছানোর কারণে শেষ মুহূর্তে এই সংখ্যক যাত্রীর জন্য আসন পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ থেকে এবার পবিত্র হজ পালন করতে যাওয়ার কথা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। এদের ৯৯৩ জনের পাসপোর্ট শেষ দিনেও জমা না পড়ায় তাঁদের ভিসা পাওয়ার আর সুযোগ নেই। হজ কার্যালয়ের হিসাবে, এ বছর হজ পালন করতে ভিসা পেয়েছেন ১ লাখ ২৬ হাজার ২০৫ জন । গতকাল পর্যন্ত সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ৯৪ হাজার ৪১০ জন হজযাত্রী। হজ ফ্লাইট সূচি অনুযায়ী, ২৬ আগস্ট বিমানের শেষ প্রাক্-হজ ফ্লাইট। ২৭ আগস্ট সৌদি এয়ারলাইনসের শেষ প্রাক্-হজ ফ্লাইট। বাকি দিনগুলোতে হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পাঠাতে হবে ভিসা পাওয়া ৩১ হাজার ৭৯৫ জন।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ২৬ তারিখে দুটি অতিরিক্ত স্লট পাওয়া গেছে। ২৭ ও ২৮ আগস্টে হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত ১২টি স্লটের আবেদন করা হয়েছে। এই স্লটগুলোর পূর্ণ ব্যবহার করা গেলে সব যাত্রীকে নিয়ে যাওয়া যাবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি