চলে গেলেন নায়করাজ খ্যাত চলচ্চিত্র নায়ক রাজ্জাক। গত সোমবার সন্ধ্যায় তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি …….. রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। নায়করাজের মৃত্যুর খবরে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনসহ সর্বত্র নেমে আসে শোকের ছায়া। ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং তার ভক্তকূল। সবার মুখে ছিল প্রিয়জন হারানোর বিষাদের ছায়া। সহকর্মীদের অনেককে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায়। নায়করাজের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পৃথক শোকবার্তায় তারা াবংলঅদেশের চলচ্চিত্রে মরহুম এ ল্পিীর অপরিসীম অবদানর কথা স্মরণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। মরহুম রাজ্জাক মৃত্যুকালে স্ত্রী লক্ষ্মী তিন পুত্র ও ২ কন্যা রেখে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে নামাজে জানাজা এবং বুধবার তাকে বনানী গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
১৯৪২ সালে অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নেয়া আবদুর রাজ্জাক এক সময় নায়করাজে পরিণত হবেন এ কথা হয়তো তখন কেউই ভাবেন নি। স্কুল জীবন থেকে অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিল তার। স্কুলেই অংশ নিয়েছিলেন নাটকে। তারপর কলকাতার টালিগঞ্জ এবং মুম্বাইয়ের ফিল্ম পাড়ায় ঘোরাঘুরি করেছেন একটু সুযোগ পাবার জন্য। কিন্তু মুসলমান রাজ্জাককে কেউ সুযোগ দেয়নি। বাধ্য হয়ে তিন চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশে। সেটা ১৯৬৪ সালের কথা। যুক্ত হন এদেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে। ১৯৬৬ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান তার বেহুলা চলচ্চিত্রে নায়ক লখিন্দরের চরিত্রে ব্রেক দেন রাজ্জাককে। প্রথম সুযোগেই বাজীমাত। তার অনবদ্য অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করে। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে গেছেন। এদেশের চলচ্চিত্রের প্রথম সারির নায়িকাদের সঙ্গে জুটি বেধে তিনি হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। ষাটের দশকে রাজ্জাক-কবরী জুটি ছিল সবার পছন্দ। সে সময় সব নায়িকাই চাইত রাজ্জাকের সঙ্গে অভিনয় করতে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক আহমেদ জামান চৌধুরী তাকে নায়করাজ অভিধায় অভিহিত করেন। সে থেকে নায়করাজ ও নায়ক রাজ্জাক কথাগুলো হয়ে ওঠে সমার্থক।
এদেশের চলচ্চিত্রের আকাশে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল তারকা। অনেক উপরে ছিল তার অবস্থান। অনেক নায়ক অভিনেতা এরপর এসেছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে। কিন্তু কেউ-ই নায়করাজের উচ্চতাকে স্পর্শ করতে পারেন নি। সবার কাছে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। কাউকে কখনো কটু কথা বলেননি। তার অমায়িক ব্যবহার অল্পতেই যে কাউকে তার অনুরক্তে পরিণত করেছে। নতুন নায়ক নায়িকাদের তিনি ছিলেন অভিভাবক।
অভিনয় জীবনে সাফল্যের শিখরে আরোহন করেছিলেন তিনি। অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যেগুলোর প্রায় সবই ছিল ব্যবসা সফল। রাজ্জাক নায়ক মানেই ছবি হিট-এমন একটি কথা এক সময় প্রবাদ বাক্যের রূপ নিয়েছিল ঢাকাই চলচ্চিত্রে। অভিনয়ের জন্য তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন। ২০১৩ সালে তাকে দেয়া হয় আজীবন সম্মাননা। অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন তিনি। চাপাডাঙ্গার বউসহ বেশ কয়েটি ভালো ছবির নির্মাতা ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক।
একজন মানুষের চলে যাওয়া মানে একটি স্থান শূন্য হওয়া। কিছু কিছু শূন্যস্থান পূরণ হয়, আবার কোনো কোনোটি পূরণ হয় না কখনোই। নায়করাজ রাজ্জাকের না ফেরার দেশে চলে যাওয়া তেমনি একটি বিশাল শূন্যত সৃষ্টি করলো আমাদের চলচ্চিত্র জগতে। আগামীতে হয়তো বহু অভিনেতাই আসবেন, কিন্তু নায়করাজের শূন্যস্থান কখনোই পূরণ হবে না।
আমরা তার রূহের মাগফিরাত কামনা করি।