নিজস্ব প্রতিবেদক:
কমলাপুর রেলস্টেশনে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভিড় জমিয়েছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। অনেক টিকিট প্রত্যাশী ৩১ আগস্ট শেষ দিনের টিকিট পেতে গতকাল সন্ধ্যা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। অনেকে গভীর রাতে এসে লাইনে যোগ দেন। হাজারো মানুষ এত কষ্টের পরও যদি একটি টিকিট মেলে সেই আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর টিকিট না পেয়ে অনেককে ফিরে আসতে দেখা গেছে হতাশ হয়ে। আবার অনেকে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার কমলাপুর রেলস্টেশনে পঞ্চম দিনের মতো ট্রেনের অগ্রিম টিকিট দেয়া হচ্ছে। কিন্তু রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি ট্রেনের টিকিট দুপুরের আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখনও টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে । স্পেশাল ট্রেন সার্ভিসের টিকিট এখন দেওয়া হচ্ছে। টিকিট বুকিং সহকারী জানিয়েছেন সেটাও কিছুক্ষণের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সকাল আটটায় শুরু হয় ৩১ আগস্টের অগ্রিম টিকিট প্রদান। আজ টিকিটের চাহিদা বেশি থাকবে এমনটা জেনে অনেকেই গতকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। এক পর্যায়ে লাইন স্টেশন ছেড়ে রাস্তায় চলে আসে। ১২টার মধ্যেই টিকিটের চাহিদা অনেক থাকায় বেশ কিছু ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তবে কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ১ সেপ্টেম্বর যারা যেতে চায় তাদের আগামীকাল টিকিট দেয়া হবে। শাহজাহান রাজশাহীর টিকিট নিতে গতকাল বিকালে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন । আজ দুপুর বারটায় চারটি টিকিট পাওয়ার পর তার মুখে স্বস্তির ঝিলিক দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘ভাই অনেক শঙ্কায় ছিলাম টিকিট পাব কিনা। শেষ পর্যন্ত টিকিট পেলাম, অনেক ভালো লাগছে। এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারব পরিবার নিয়ে।’ ইসমাঈল এসেছিলেন লালমনি এক্সপ্রেসের টিকিট নিতে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে পড়েন বারটার আগেই ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে এমনটা শুনে। তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে এত কষ্ট করে লাইনে দাঁড়ালাম কিন্তু এখন কাউন্টার থেকে বলছে লালমনির টিকিট নাই। এখন বাড়ি যাব কিভাবে সেটাই চিন্তা করছি।’ শুধ ইসমাঈলই নয়, এ রকম আরও অনেকেই টিকিটের দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এখন শুধু স্পেশাল ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। বুকিং সহকারী জানিয়েছেন সেটাও আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
দুপুর সাড়ে বারটার দিকে ঈদের অগ্রিম টিকিটের বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশনের বুকিং সহকারী সোলায়মান হোসেন বলেন, কাউন্টারে লালমনি এক্সপ্রেস এবং রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু ঈদ স্পেশাল পার্বতীপুরের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এই টিকিট কতক্ষণ দিতে পারবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যে অবস্থা তাতে এক ঘণ্টার মধ্যেই এই টিকিট শেষ হয়ে যাবে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘ট্রেনের সম্পদ সীমিত। এ সীমিত সম্পদ দিয়ে এত মানুষের সেবা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে স্পেশাল সার্ভিসের ১ সেপ্টেম্বরের টিকিট আগামীকাল স্বাভাবিক নিয়মেই দেয়া হবে। যাত্রীরা সেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। যাত্রীদের হাতে যেন টিকিট দিতে পারি, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছি।’ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। স্পেশাল ট্রেনগুলি আরও ২৬শ টিকিট যোগ হবে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অনলাইনে, ৫ শতাংশ ভিআইপি, ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে।
দৈনিক দেশজনতা/আই সি