নিজস্ব প্রতিবেদক:
নীলফামারীতে মাকে বেঁধে রেখে তিন সন্তানের মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাত অনুমানিক তিনটার দিকে জেলার ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছচাপানী ইউনিয়নে ছাতুনামা চর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। ধর্ষিতার পরিবারের মৌখিক অভিযোগে রোববার সকাল ১১টার দিকে ধর্ষিতাকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর হতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ।
ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ধর্ষণের অভিযোগকারী নারী ও তার মাকে ডাক্তারি পরীক্ষাসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য নীলফামারী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এঘটনায় মেয়েটির বাবা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও তিনি জানান।
ধর্ষিতার মা অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ের স্বামী কৃষি শ্রমিক হওয়ায় ১০ দিন থেকে এলাকার বাহিরে কাজে গেছে। সে কারণে আমি মেয়ে নাতিদের নিয়ে তাদরে বাড়িতেই অবস্থান করছি। শনিবার রাত অনুমান তিনটার দিকে হঠাৎ করে ঘরের দরজা ভেঙ্গে আট/নয় জন লোক ঘরে ডুকে আমাকে হাত-পা- মুখ বেঁধে ঘরের বাহিরে একটি খুঁটির সঙ্গে আমাকে আটকে রাখে। ওই সময় মেয়ের তিন সন্তানকেও মুখে বেঁধে মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় একজন আমার নাতি-নাতনিদের মুখের বাঁধন খুলে দিয়ে যায়। তখন তাদের ডাক-চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে আসেন। পরে বাড়ির আশপাশে তারা মেয়েকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পেতে ব্যর্থ হয়। পরদিন রোববার বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে হাত, পা, মুখ বাঁধা অজ্ঞান অবস্থায় মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখে এলাকার লোকজন আমাদের খবর দেয়। সেখানে গিয়ে দেখি, হাত, মুখ, পা বাঁধা অবস্থায় ধান ক্ষেতের একটি ফাঁকা জমিতে আমার মেয়ে অচেতন অবস্থা পড়ে রয়েছে। এসময় তার পরনের কাপড় ছেড়া ছিল।
তাৎক্ষণিক থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মেয়েকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। ধর্ষিতার মামা জানান,‘আমার বোন ও ভাগনির কাছে ঘটনা শুনেছি। ঘটনার সাথে এলাকার রহিম উদ্দিন এবং মিস্টার নামে দুই ভাইকে আমার বোন চিনতে পারলেও অন্যদের চিনতে পারেনি।
এদিকে মেয়েটির বড় ভাই জানান, আমার বাবার ক্রয়কৃত ৬ একর জমির মালিকানা নিয়ে প্রতিবেশি মৃত. আজিজুল হক মুকুলের ছেলে ফিরোজুল (৩২), আবুল হোসেনে ছেলে দেলওয়ার হোসেন (৪০), মিস্টার (৩৫) ও রহিম উদ্দিন (৩০), মৃত চাটিমামুদের ছেলে নূর মোহাম্মদ চেতনা (৫০), মৃত মকলেছার রহমানের ছেলে ফরিদুল (৩৫), আলমগীর (৩০), পেনকাটু মামুদের ছেলে মঙ্গলু (৫০), এবং পশ্চিম ছাতুনামা গ্রামের সুরেশ রায়ের ছেলে সুধির রায় (৩৫) ও মৃত অভয় চন্দ্র সরকারের ছেলে নির্মল চন্দ্র সরকারের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সেই বিরোধের জের ধরে তারা শনিবার রাত তিনটার দিকে আমার বোনের বাড়িতে গিয়ে মাকে হাত-পা- মুখ বেঁধে রেখে আমার বোনকে তুলে নিয়ে যায়।
এদিকে ধর্ষিতার পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে মিস্টারের স্ত্রী আরর্জিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী, ভাষুর দেলওয়ার ও দেবরের রহিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর তারা বাজার থেকে বাড়িতে এসে রাতে খাবার খেয়ে নিজ নিজ ঘরেই শুয়েছিলেন। এমনকি আমার ভাষুর ও দেবরও তাদের নিজ ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। দেলওয়ারের স্ত্রী লাকী বেগম জানান, তার স্বামী রাতে বাসায় ছিলেন। ফজরেরে নামাজের পর তিনি শুনতে পান ওই মেয়েকে নাকি আমার স্বামী, দেবররা মিলে ধর্ষণ করেছে। তারা আমাদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ করছে। ফরিদুলের স্ত্রী শাপলা বেগম বলেন, তাদের সাথে আমাদের জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে আমাদের বিরোধ চলছে। তাই তারা আমাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মতো একটা জঘন্য অভিযোগ তুলছে। রহিম উদ্দিনের স্ত্রী নাসিমা বলেন, তারা মিথ্যা নাটক সাজিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছে। আমার স্বামীসহ সকলেই নির্দোষ। ওরা মিথ্যা কথা বলছে।
ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন‘ মৌখিক অভিযোগে ওই নারীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করেনি। মামলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তৃষণা রাণী সেন জানান, দুপুরে সোয়া দুইটার দিকে জরুরী বিভাগে ধর্ষণের শিকার মেয়েটি ও তার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিকাল তিনটার দিকে তাদের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নীলফামারী সদর আধুনিক হাসাপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুলতানা রাজিয়া জানান, মেয়েটির শরীরিক পরীক্ষা শেষে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ