২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:১৪

ভোলায় কাঁকড়া চাষে স্বাবলম্বী শতাধিক কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভোলায় মাছের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে কাঁকড়ার চাষ। সাদা সোনা গলদা চিংড়ির বাজার দখল করতে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের চরফ্যাশন উপজেলায় শুরু হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ। সাবলম্বী হয়েছেন সেখানকার অনেক চাষী। কাঁকড়া চাষ, শিকার ও বিক্রির করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ। এসব কাঁকড়া দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে।

জেলার দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় চরফ্যাশন উপজেলার চরকচ্ছপিয়া, চরমন্তাজ, চরপাতিলা, চরদাঁতভাঙ্গা, কালকিনি, চরমানিকা, চরনিজাম, চর কুকরি-মুকরি, ঢালচরসহ মনপুরা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান বয়েছে। এসকল এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে কয়েক’শ ছোট-বড় খাল।

সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় লবণাক্ত পানির সুবাদে এ সমস্ত এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া। বড় আকারের কাঁকড়া খাল থেকে ধরে বিক্রি করা হলেও ছোট কাঁকড়াগুলো পুকুর বা হ্যাচারিতে চাষ করছেন অনেক চাষী।

সরেজমিনে কাঁকড়া চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকায় পুকুরে জাল দিয়ে হ্যাচারি তৈরি করে কাঁকড়া চাষ করা হয়। লবণাক্ত পানির কারণে কাঁকড়া চাষে অনেক সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া রোগ বালাইও কম হয়। কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় জেলেদের জালে ধরা পড়া ফেলে দেয়া ছোটমাছ। কম খরচ ও পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় চাষীরাও সারাদিন কাঁকড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন পুকুর ও হ্যাচারিতে।

চর কুকরি এলাকার কাঁকড়া চাষী ফিরোজ মেম্বার জানান, তিনি ২০১৩ সালে এফডিবি সংস্থার সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে পুকুরে নেটজাল দিয়ে কাঁকড়া চাষ শুরু করেন। মাত্র কয়েক মাস পর তিনি কাঁকড়া বিক্রি করে পুঁজির চেয়ে কয়েকগুণ টাকা আয় করেন। তখন থেকে তিনি কাঁকড়া চাষকে প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

ফিরোজ মেম্বারের মতো একই এলাকার সবুজ, সাত্তার, বাবুল মুন্সি, সিরাজ হালাদারসহ শতাধিক চাষী কাঁকড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের দেখাদেখি অনেকে এখন এ পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। কাঁকড়া শিকার করে অনেক বেকার যুবক অর্থ উপার্জন শুরু করেছে। কাঁকড়া শিকারী ইয়াছিন জানান, আষাঢ়, শ্রবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এ চার মাস অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি কাঁকড়া পাওয়া যায়। তখন দামও একটু কম থাকে। বর্তমানে কাঁকড়া কম পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি। শিকারির সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। প্রতিদিন যে কাঁকড়া পান তা বিক্রি করে তার সংসার ভালোই চলে।

স্থানীয় কাঁকড়া ব্যাবসায়ীরা জানান, ১০০ গ্রাম ওজনের নিচে প্রতিটি কাঁকড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা হারে প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। গ্রেড সাইজ ২০০ গ্রামের ওপরে কাঁকড়া কেজি ৫৫০ টাকা, ৩০০ গ্রাম ওজনের কেজি ৭৫০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি কাঁকড়া ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়। এসকল কাঁকড়া প্রতিদিন ঢাকার মোকামে পাঠানো হয়।

চর কচ্ছপিয়া ঘাটের কাঁকড়া ব্যবসায়ী সিরাজ জানান, তার আড়তের অধীনে প্রায় শতাধিক কাঁকড়া শিকারি রয়েছে। চাষী ও শিকারিরা কাঁকড়া এনে তার আড়তে বিক্রি করেন। প্রতিদিন তিনি ঢাকা মোকামের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাঁকড়া কেনেন। এসকল কাঁকড়া প্রতিদিন লঞ্চযোগে ঢাকা পাঠান। সেখান থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ১৮ দেশে এ কাঁকড়া রফতানি করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার বলেন, উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে কাঁকড়া চাষ করে অনেক চাষী সফল হয়েছেন। কাঁকড়া চাষের উপর সরকারিভাবে প্রকল্প করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে চাষীদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি জানান।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :আগস্ট ২০, ২০১৭ ১২:৪৫ অপরাহ্ণ