নিজস্ব প্রতিবেদক:
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কয়েকদিন ধরে যমুনার পানি বাড়তে থাকলেও বর্তমানে কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার পাঁচ উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশেষ করে সদরের কাওয়াকোলা ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম সম্পন্ন তলিয়ে গেছে। এক টুকরো উঁচু জায়গাও নেই মানুষের আশ্রয় নেওয়ার মতো। বাধ্য হয়ে কেউবা নৌকায় কেউবা ঘরের চালে কেউবা চৌকি উঁচু করে রান্নাবান্না করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সার্বক্ষণিক পানিতে থাকায় হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও অনেক পানিবন্দি মানুষে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এনায়েতপুরে গোপালপুর-পাঁচিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একশত মিটার এলাকা ভেঙে গেছে। এতে প্রবল বেগে বাঁধের অভ্যন্তরে পানি ঢুকে পড়ছে। পানি ঢুকায় এনায়েতপুর থানার জালালপুর, খুকনী ও শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ও বেলতৈল ইউনিয়নের অন্তত এক থেকে দেড় হাজার হেক্টর আমন ধান তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কিছু ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পানি উঠতে শুরু করেছে। বাঁধটি শাহজাদপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে এনায়েতপুরের দুটি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা হওয়ায় যাত্রা পথে এসব মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে বন্যা কবলিতদের মধ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর চরাঞ্চলগুলো একেবারে তলিয়ে যাওয়ায় উঁচু জায়গার অভাবে অনেকে ঘরে চালে বা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করা হলেও চরাঞ্চলের এখনো অনেক স্থানে তা পৌঁছেনি। কাওয়াকোলা ইউনিয়নের দোরতা গ্রামের আমিনুল ইসলাম ও তারা মিয়া বলেন, আমাদের ইউনিয়নে উঁচু জায়গা নেই যেখানে আশ্রয় নেব। সবখানেই পানি আর পানি। টিউবওয়েল তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি দিয়ে রান্না কাজ করা হচ্ছে। এ গ্রামে এক দুটি টিউবওয়েল পানি উঠছে। সেখান সাঁতরে গিয়ে পানি আনতে হয়। অনেক সময় পানি ফুরিয়ে গেলে বন্যার পানিও খেতে হচ্ছে। কাওয়াকোলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আলিম জানান, কাওয়াকোলা ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে জীবনযাপন করছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, মাত্র আটদিনের বন্যায় জেলার ৪০টি ইউনিয়নের ২৯০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ২৪৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকারিভাবে ইতোমধ্যে ৩৩৫ মেট্রিক টন চাল সাড়ে ১২ লাখ টাকা বিতরণের জন্য ৫টি উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, পানি বিপদসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এনায়েতপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নয়, তবে সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। এতে গ্রামের বেতর পানি ঢুকছে। শুষ্ক মৌসুমে এটি মেরামত করে দেওয়া হবে। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, বন্যার্তদের মাঝে জন প্রতি ১০ কেজি করে চাল, নগদ টাকা, শুকনো ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তালিকা তৈরি ও দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় কিছু সমস্যা হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলার যে সব মানুষ পানিবন্দি রয়েছে প্রত্যেককে ত্রাণ তৎপরতার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়াও শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরো জানান, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পুনর্বাসনে সার্বিক সহায়তা করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া ৩৩৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাড়ে ১২ লাখ টাকা তিন দিন ধরে বিতরণ করা হচ্ছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি