শিল্প–সাহিত্য ডেস্ক:
অধ্যাত্ম দার্শনিকতায় ব্যতিক্রমধর্মী ২৩২টি খণ্ড কবিতার সমন্বয়ে আ. শ. ম. বাবর আলী রচিত একটি অনন্য কাব্যগ্রন্থ ‘রুবাইয়াত। প্রতিটি ৪ পংক্তির কবিতাগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ধর্মকে নিয়ে সাধারণ ধর্মধারীদের যে অপব্যাখ্যা, যে গোঁড়ামী অতি প্রাসঙ্গিক যুক্তির মাধ্যমে তার অপনোদন করা। অবশ্য সরাসরি ব্যাখ্যা তিনি একটিরও করেননি। প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেছেন তিনি স্রষ্টার কাছে, পরোক্ষভাবে স্বল্পজ্ঞানী ধর্মধারীদের কাছে। স্রষ্টার কাছ থেকে যে জবাব দেবেন, সে জবাব পরোক্ষভাবে কবি নিজেই দিয়েছেন। গোঁড়া ধার্মিকরা যে জবাব দেবেন তাও কবির জানা। আর জানা বলেই তাঁদের অপক্ক জ্ঞানের কাছে কবি যে অপনামে অথবা অপবাদে খ্যাত হবেন, সেজন্য তাঁর কোনো খেদ নেই। কারণ তিনি জানেন, স্বল্পজ্ঞানী ব্যক্তির দুর্নামে সত্য কখনো পরাহত হয় না। তাছাড়া প্রশ্নের মাধ্যমে স্রষ্টার কাছে যে আরজি তিনি পেশ করেছেন, সেই আরজির মধ্যেই তো তিনি প্রশ্নের জবাব রেখেছেন অতি যৌক্তিকভাবেই যেমন-‘ইহকালে আমায় মাবুদ দিলে তুমি যে শিক্ষা,/ পরকালে তোমায় আমি করবো তারই পরীক্ষা।/ ক্ষমা করা মহৎ যে গুণ- বলছো তুমি বারংবার,/ কত বড় গুণি তুমি সেদিন হবে সমীক্ষা।’ কিম্বা- আকাশ-বাতাস সাগর-মরু নবখানেতে তোমার ঠাঁই,/ জান্নাত মাঝে আছো তুমি জাহান্নামে কি তুমি নাই?/ তাইতো আমি ভয় করি না জাহান্নামের অগ্নিতে,/ আমার সাথে থাকবে তুমি কিসের ভয় আর আমার তাই?’
অন্য রকম অনেক রুবাইয়াতের একটি- ‘ঠুকছে মাথা থাকছে উপোস- এই যদি হয় ধর্ম তোর,/ ধর্মাধর্ম কয় যে কারে- লাগছে আমার তাইতো ঘোর।/ ঠুকছে মাথা গাইছে গিবত করছে যে পাপ রাত্রদিন,/ ধর্মহীন কি তারচে’ পাপী?/ জানতে গো সাধ হয় যে মোর।’ কিম্বা-‘বললেন সেদিন মোল্লা সাহেব ধর্মগুরুর ভঙ্গিতে,/ তোমায় নাকি যায় না পাওয়া নাপাক স্থানের গণ্ডিতে।/ তাই যদি হয় সেথায় যেয়ে করবো যে পাপ নির্ভীকে,/ নাই যদি রও সেথায় তুমি আসবে কে মোর দণ্ডিতে?’
অন্য প্রাসঙ্গিক আর একটি- ‘পড়ছে আটক ধর্ম আজি দেওয়াল ঘেরা মসজিদে,/ বিশ্বের সব মুসলিম তাই অচেতন আজ ঘোর নিদে।/ গুড়িয়ে দেওয়াল ও মসজিদের বাইরে তারে আনতে চাই,/ তোমার মদদ নিয়ে মাবুদ ধরছে আমায় এই জিদে।’
এমনি ধরনের বক্তব্যের ২৩২টি রুবাইয়াতই উচ্চস্তরের অধ্যাত্ম চিন্তাপ্রসূত। বক্তব্য সমূহ সাধারণ পাঠে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকর মনে হলেও চিন্তাশীল ধার্মিকজনের জন্য উচ্চমার্গীয় চিন্তার খোরাক জোগাবে। যাঁরা গোঁড়ামীমুক্ত মন নিয়ে চিনতে চান স্রষ্টাকে, সঠিকভাবে জানতে চান স্রষ্টার মনোনীত ধর্ম এবং ধর্মীয় বিধানকে, তাঁদের জন্য আ. শ. ম. বাবর আলীর ‘রুবাইয়াত’ খন্ডকাব্য গ্রন্থটি ধর্মদার্শনিকতার প্রসার বিস্তারে নিঃসন্দেহে সহায়ক হবে।
গ্রন্থের প্রথমে ‘রুবাইয়াত ও আমার কথা’ শিরোনামের ভূমিকাতে রুবাইয়াত কবিতার ইতিহাস, ধরন ও বিশেষত্ব বিষয়ে কবি যে বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন, সাহিত্যরস পিপাসু পাঠকদের জন্য তা বাড়তি লাভ।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘সাহিত্যদেশ’ এ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ২০১২ সালে। অলঙ্করণ ও প্রচ্ছদ এঁকেছেন রফিকুল ইসলাম ফিরোজ। উন্নত মানের কাগজে ছাপা চার ফর্মার এ গ্রন্থটির মূল্য মাত্র একশত টাকা।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ