নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাইবান্ধায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ১০০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২০ দশমিক ৮২, ঘাঘট নদীর পানি ডেভিট কোম্পানিপাড়া পয়েন্টে ৮২ সেন্টিমিটার বেড়ে ২২ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার ও করতোয়া নদীর পানি কাটাখালী পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার বেড়ে ২০ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার কমে তা বিপদসীমার ২৪ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে সারাদিনে বৃষ্টিপাত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবর রহমান জানান, এর আগে সোমবার রাত ৮টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি ৭৭ সেন্টিমিটার, করতোয়ার পানি ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তিস্তার পানি বিপদসীমার নিচে ছিল।
জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ৩৪ হাজার ৯৫৬টি পরিবারের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহর রক্ষা বাঁধের খোলাহাটি, চকমামরোজপুরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা ফেলে হলদিয়া ও কামারজানিসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানির স্রোতে সুন্দরগঞ্জ-পঞ্চনন্দ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাঁচা পাকা প্রায় সব সড়কের উপর দিয়ে পানি ওঠায় যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বন্যা কবলিতদের আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে ঠাঁই নিতে বলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষজন সহায়-সম্পদ নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে শুরু করেছে।
ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সেনাবাহিনীর তদারকিতে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। সোমবার বিকেলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া এলাকা পরিদর্শন শেষে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাঁধ রক্ষায় মেরামতের কাজ শুরু করেন।
গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যা কবলিত এলাকার ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়েছে। বন্যার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক জমির পাটের জাগ ও কয়েক শ’ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে আমন বীজতলা, আমন ক্ষেতসহ নানা ধরণের সবজির ক্ষেত।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) গৌতম চন্দ্র পাল জানান, বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ৫শ’ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা কবলিত মানুষের নামের তালিকা তৈরির জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ